স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশ। এ মর্যাদা পাওয়া গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পণ্য রফতানিতে বিদ্যমান শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা আর থাকবে না। তখন ‘জিএসপি প্লাস’ কাঠামোর অধীনে শুল্ক্কমুক্ত রফতানির সুযোগ থাকবে। এ সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশকিছু শর্ত প্রতিপালন করতে হবে বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি তেরিঙ্ক। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার রাজধানীতে বিকেএমইএর সঙ্গে বৈঠকে বিস্তারিত না বললেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২৭টি কনভেনশনের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ অনুচ্ছেদে সুশাসন, পেশাগত নিরাপত্তা, পরিবেশের উন্নয়নের মতো বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।
পোশাক খাতের নিট পণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত। ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা বিষয়ক এ আলোচনা গতকাল সোমবার বাংলামটরে বিকেএমইএর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিকেএমইএর নেতৃত্ব দেন সংগঠনের প্রথম সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ।
এলডিসি হিসেবে ২০০১ সাল থেকে অস্ত্র ব্যতীত সব পণ্যে ‘এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)’ কাঠামোর অধীনে ইইউর ২৮ দেশে রফতানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। এ সুযোগে বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ রফতানির গন্তব্য ৫০ কোটি ক্রেতার বাজার ইইউ। ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হলে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ৩ বছর পর্যবেক্ষণে থাকবে বাংলাদেশ। এ তিন বছরও জিএসপি সুবিধা মিলবে। অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ২০২৭ পরবর্তী সময়ে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেতে জিএসপি প্লাস কাঠামোতে আবেদন করতে হবে। বর্তমানে এজন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বৈঠকে বিকেএমইএর পক্ষ থেকে বিদ্যমান জিএসপি সুবিধা আরও অন্তত ১২ বছর অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সংগঠনের নেতারা বলেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আইএলওর ২৭টি শর্ত প্রতিপালন বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না। ফলে জিএসপি সুবিধা উঠে গেলে ইইউতে রফতানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ইইউর অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা (পিটিএ) চালুর প্রস্তাব করেন তারা। উদ্যোক্তাদের অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে অশুল্ক্ক বাধা দূর করা এবং ব্যবসায়ীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা। এ ছাড়া আগামী ৩ বছরের মধ্যে নিট খাতের ২০০ কারখানাকে পরিবেশ সহায়ক সবুজ কারখানায় রূপান্তরের পরিকল্পনায় ইইউর প্রযুক্তি সহযোগিতা চান তারা। আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিট খাতের অবদান, ইইউর সঙ্গে নিট খাত কেন্দ্রিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সম্ভাবনা নিয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়।
ইইউ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, পোশাক খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম প্রশংসার দাবি রাখে। সংস্কারের এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে হবে। সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের যে নতুন অবস্থান তৈরি হয়েছে তা বহির্বিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপে প্রচারের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি। এ বিষয়ে তার পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত। উদ্যোক্তাদের অন্য দাবিগুলো ইইউ নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইইউ ডেলিগেশনের অর্থনীতি, শিল্প ও তথ্য বিভাগের প্রধান কন্সটেনটিনো ভারদাকিস, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, পরিচালক মোস্তফা জামাল পাশা, আশিকুর রহমান, শেখ এইচএম মোস্তাফিজ, মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল প্রমুখ।