তৈরি পোশাক শিল্পের ধারাবাহিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ও উদ্যোক্তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এ শিল্পের শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ফলে দেশের তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এ শিল্পে অর্জিত দক্ষতা ও সুনামের জন্য কেনিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে বাংলাদেশী জনবল দিয়ে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। গতকাল বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘১৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক সুতা ও বস্ত্র প্রদর্শনী’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
আন্তর্জাতিক আয়োজক সংস্থা সেমস গ্লোবাল ও চীনের সাব-কাউন্সিল অব টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ (সিসিপিআইটি) যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। সুতা ও বস্ত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি গতকাল ‘দ্বিতীয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ডেনিম শো’ ও ‘৩০তম ডাইক্যাম বাংলাদেশ এক্সপো ২০১৮’ শীর্ষক দুটি প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স চিন উই, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. ফারুক হাসান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মো. মনসুর আহমেদ, সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির (সিইবিএআই) সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, সেমস গ্লোবালের প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহেরুন এন ইসলাম ও সিসিপিআইটির সেক্রেটারি জেনারেল ঝ্যাং টাও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ছিল ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাত থেকে ২ হাজার ৮০০ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৪৯ কোটি ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ হাজার ১৫১ কোটি ডলারের রফতানি আয় হয়েছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১ হাজার ১৯৬ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৩ কোটি ডলার বেশি।
আমির হোসেন আমু বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের ধারাবাহিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে গার্মেন্ট শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা জোরদার, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, শিল্প-কারখানা পরিদর্শন ও মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। ২০১৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন এবং জাতীয়ভাবে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকার ও উদ্যোক্তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এ শিল্পের শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে দেশের তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এ শিল্পে অর্জিত দক্ষতা ও সুনামের জন্য কেনিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে বাংলাদেশী জনবল দিয়ে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অতীতে ছিল, এখনো রয়েছে। এ খাতে বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি ঠেকাতে প্রতিযোগীরা তত্পর রয়েছে। তবে কোনো অপতত্পরতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত করতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে এ শিল্পে ব্যাপক গুণগত পরিবর্তন এসেছে। এরই মধ্যে দেশের ২৮৫টি কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত হয়েছে। সংস্থাটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিশ্বের ১০টি পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানার মধ্যে বাংলাদেশের সাতটি স্থান করে নিয়েছে। বক্তারা তৈরি পোশাক শিল্পে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পশ্চাত্সংযোগ শিল্পের পাশাপাশি অগ্রসংযোগ শিল্প গড়ে তোলার তাগিদ দেন। বর্তমানে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদার মাত্র সাড়ে ৬ শতাংশ জোগান দিচ্ছে উল্লেখ করে তারা এ খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।
প্রদর্শনীর আয়োজক সংস্থা সেমস গ্লোবাল জানিয়েছে, চার দিনব্যাপী এ ত্রিমাত্রিক প্রদর্শনীতে বিশ্বের ২১টি দেশের ৩৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তারা বিভিন্ন ধরনের সুতা, ডেনিম, নিটেড ফ্যাব্রিকস, ফ্লিস, ইয়ার্ন অ্যান্ড ফাইবার, আর্টিফিসিয়াল লেদার, এম্ব্রয়ডারি, বাটন, জিপার, লিনেন ব্লেন্ডসহ অ্যাপারেল পণ্য প্রদর্শন করছে। এ প্রদর্শনী বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক শিল্প খাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তরে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রদর্শনী চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।