আমদানি নির্ভরতা কমাতে কটনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে ভিসকস (রেশম) উৎপাদনের দিকে সরকার এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে আখ চাষ বন্ধ করে ওই জমিতে তুলা চাষ করা যেতে পারে। এতে বৃহৎ পরিমাণে তুলা উপাদন করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রাজধানীর রেডিসন হোটেলে বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘গোবাল কটন সামিট-২০১৮’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তপন চৌধুরী, আন্তর্জাতিক কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মির্জা সালমান ইস্পাহানি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী আলী এবং সামিট আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. আইয়ুব প্রমুখ। যৌথভাবে দুই দিনের এ সামিট আয়োজন করেছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএ)। মুহিত বলেন, বস্ত্র খাতে আমাদের ৫ হাজারের মতো কারখানা আছে। এই খাত আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত প্রায় বেশিরভাগ কাঁচামালই আমদানিনির্ভর। এক্ষেত্রে দেখা যায় চাহিদার মাত্র ৩ শতাংশ কটন দেশীয়ভাবে উৎপাদন করছি, বাকি ৯৭ শতাংশ আমদানি করতে হচ্ছে। তবে আমরা এ অবস্থা থেকে বের হতে চাইছি। কটনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে তৈরি ভিসকস উৎপাদনের দিকে আমরা এগোচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে তুলা উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট জমি নেই, সে জন্য দেশীয়ভাবে কটনের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। চিনি ও তামাকজাত পণ্য উৎপাদন বন্ধ করে এসব জমিতে তুলা চাষ করা উচিত। কেননা দেশীয়ভাবে চিনি উৎপাদন লাভজনক নয়, এছাড়া তামাকও কোন ভালো ফসল নয়। তাই এসব চাষ বন্ধ করে তুলা চাষ করা উচিত। তাহলে কিছুটা হলেও কটনের চাহিদা মেটানো যাবে।
তিনি বলেন, আখ চাষ খুবই ব্যয়বহুল। সুতরাং এ শিল্পটি মারা যাবে। দীর্ঘদিন ধরেই আখ শিল্প অলাভজনক। আমাদের উচিত হবে আখ চাষ থেকে বেরিয়ে আসা। আমি মনে করি আখ চাষ বন্ধ করে ওই জমিতে তুলা চাষ করা যেতে পারে। এতে আমরা প্রচুরপরিমাণে তুলা উপাদন করতে পারবো।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, আমাদের দেশে বস্ত্রশিল্প গড়ে উঠলেও এর কোন নির্দিষ্ট আইন নেই। তবে বর্তমান সরকার এ বিষয়টি অনেক আগে থেকে চিন্তা করে আসছিল। এরই ফলশ্রুতিতে মন্ত্রিপরিষদে বস্ত্র আইন নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটি পেশ করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে তুলার সংকট রয়েছে। কটনের চাহিদার মাত্র ৩ শতাংশ আমরা দেশীয়ভাবে পূরণ করতে পারি। এজন্য তুলা চাষের প্রয়োজনীয় জমি আমাদের নেই। আমরা পাট থেকে ভিসকস উৎপাদনের পদক্ষেপ নিয়েছি। পাট থেকে ভিসকস উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দরকার। সেই ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা যদি আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে ফিজিবিলিটি প্রতিবেদন পেয়ে যাই, তাহলে জুন মাসের মধ্যে ভিসকস ফ্যাক্টরি নির্মাণ করবো। প্রায় ৭১ একর জমির ওপর যে ফ্যাক্টরি তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকে প্রতিবছর আমরা প্রায় ৩৫ হাজার টন ভিসকস উৎপাদন করতে পারবো।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সামিটে বাংলাদেশ, ভারত, সুদান, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, মালি, বুরকিনা ফাসো, চাদ, তুরস্ক, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।