তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের বিশ্ববাজারে চীনের একচেটিয়া বাজার হলেও বাংলাদেশের সম্ভাবনা একেবারেই কম নয়। তবে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজনী পণ্যে অগ্রাধিকার দেওয়া গেলে বর্তমান রপ্তানি আয়কে ছাড়িয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আমাদের বাজারেও এই দেশের বিপুল সম্ভাবনা আছে। কেননা মৌলিক বা কম দামি পোশাক তৈরিতে আমাদের খুব একটা মনোযোগ নেই। কারণ বেশি খরচে কম দামের পোশাক তৈরিতে আমাদের এখন আর পোষায় না। চীনের একটি কেমিক্যাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শ্যাংডংগ গ্যাংশিয়ান পেট্রোকেমিক্যালের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক লিয়া ওয়্যু এসব কথা বলেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত (আইসিসিবিতে) ১৩তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার্ন অ্যান্ড ফ্যাব্রিক শো-২০১৮ তে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক আয়োজক সংস্থা সেমস গ্লোবাল ইউএসএ ও সিসিপিআইটি টেক্স চায়না যৌথভাবে চার দিনের এ প্রদর্শনীর আয়োজন করছে। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে।
লিয়া ওয়্যু জানান, বিশ্বের প্রায় ২০টিরও বেশি দেশে ৩০ হাজার টন কেমিক্যাল রপ্তানি হয়; কিন্তু বাংলাদেশের এ মেলায় ভোক্তার আগ্রহ দেখে আমরা বেশ খুশি। এ দেশের উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের গুণগতমান উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে চায়। আমাদের উৎপাদিত কেমিক্যাল তাদের পোশাকের মান উন্নয়নে কিভাবে ভূমিকা রাখবে এ নিয়ে ছিল অনেক প্রশ্ন। তাই আমার বিশ্বাস বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে বিশাল ব্যবধান কমিয়ে এনে শিগগিরই এগিয়ে যাবে।
এদিকে মেলায় আয়োজকরা জানান, বিশ্বের প্রায় ২১টি দেশের ৩৫০টি প্রতিষ্ঠান এ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করছে। যেখানে সব রকম সুতা, ডেনিম, নিটেড ফ্যাব্রিকস, ফ্লিস, ইয়ার্ন অ্যান্ড ফাইবার, আর্টিফিশিয়াল লেদার, এমব্রয়ডারি, বাটন, জিপার লিনেন ব্লেন্ডসহ অ্যাপারেল পণ্যের বিশাল সমাহার। প্রদর্শনীটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির ভোক্তা, উদ্যোক্তা, আমদানিকারক ও সরবরাহকারী সবার জন্য ওয়ান স্টপ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
মেলায় বস্ত্র খাতের বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নোভা ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ কাজী সায়মুন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বস্ত্র খাতের এখনো বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও নীতি সহায়তা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে আমাদের আরো অনেক জোর দিতে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে কম দামে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এ সুযোগ অন্য কোনো দেশের নেই। এমন শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে এ সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে নীতিনির্ধারকদের। বিশেষ করে কাপড় তৈরি প্রধান পণ্য সুতার আমদানি নির্ভরতা আমাদের এখনো প্রায় ৯০ শতাংশ। এ ছাড়া বেশ কিছু বস্ত্রকল ও সুতার কল থাকলেও তারা মৌলিক উৎপাদনেই বেশি ব্যস্ত। তাই বাংলাদেশকে এ খাতে এগিয়ে যেতে মূল্য সংযোজনী পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে গতকাল সকালে এই প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ প্রথম সহসভাপতি মো. মনসুর আহমেদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান সেমস গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুন এন ইসলাম।