বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য আমদানিতে ভারতের উচ্চহারে অ্যান্টি-ড্যাম্পিং শুল্ক্কারোপের কারণে দেশটিতে এসব পণ্যের রফতানি কমছে ব্যাপক হারে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ ভাগ কমে চার কোটি ৯৬ লাখে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে জুট স্যাকিং কাপড়ের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক্কের আদলে টনে ৩৫২ ডলার অগ্রিম শুল্ক্ক আরোপ করেছে ভারত। গত সোমবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।
ভারতের পাটপণ্য আমদানিকারক সব ব্যবসায়ীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর পরই জরুরিভিত্তিতে টেলিফোনে বাংলাদেশের সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে জুট স্যাকিং কাপড়ের রফতানি আদেশ বাতিল করেছেন কয়েকজন ভারতীয় আমদানিকারক। এত বেশি শুল্ক্ক দিয়ে পণ্য ছাড় করানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা।
এ নিয়ে উদ্যোক্তা এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন। করণীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সংশ্নিষ্টদের নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। করণীয় নির্ধারণে আগামী রোববার আবার বৈঠক হবে। উদ্যোক্তারা মনে করেন, এ যাত্রায় অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে গোটা পাট খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সমকালকে বলেন, পাটের পক্ষে একটা গণজোয়ারের মধ্যে ভারতের এ সিদ্ধান্ত পাট খাতের জন্য আসলেই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। করণীয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা। কীভাবে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসা যায়, তা নিয়ে কথা বলবেন তারা।
গত বছর ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশি পাটপণ্যে টনপ্রতি সর্বোচ্চ ৩৫২ ডলারসহ বিভিন্ন হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক্ক আরোপ করে ভারত। তখন জুট স্যাকিং কাপড়কে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক্ক আরোপের বাইরে রাখা হয়। বাংলাদেশ পাটপণ্য উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় কম দামে রফতানি (ডাম্পিং) করছে- এমন অভিযোগ ভারতীয় উদ্যোক্তাদের। তাদের দাবি, ভারতের স্থানীয় পাটশিল্প সংকটে পড়েছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক্ক বসানো হয়। তবে বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় কম দরে রফতানি করার মানে হচ্ছে লোকসান দেওয়া। বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো লোকসান দিয়ে ভারতে কেন পাট পণ্য রফতানি করবে।
অ্যান্টি ডাম্পিংয়ের ফলে ভারতে পাটপণ্য রফতানিতে একরকম ধস নামে। প্রথম ছয় মাসে রফতানি কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। পরে কিছুটা কমলেও চলতি অর্থবছরের আট মাসে রফতানি কমার হার ৫৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত আট মাসে ভারতে বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য রফতানি হয়েছে ৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। আগের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। এ সময় অন্য সব বাজারে পাট ও পাটপণ্যের রফতানি বেড়েছে ১৫ শতাংশের মতো।
বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশেন (বিজেএমএ) ভারতীয় সূত্রে নতুন করে শুল্ক্ক আরোপের আগাম তথ্য পেয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে গত রোববার চিঠি দেয়। এ চিঠিতে বলা হয়, ভারতে রফতানি কমে যাওয়ায় অনেক মিলে পাটপণ্য মজুদ পড়ে আছে। এ কারণে অনেক কম মূল্যে রফতানি করতে বাধ্য হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এতে মিলগুলোর লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থায় স্যাকিং কাপড়ের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক্কারোপ হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
জানতে চাইলে বিজেএমএর সচিব আবদুল বারিক খান সমকালকে বলেন, ভারত পাটের স্যাকিং কাপড়ের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করার আগে তদন্ত করতে চায়। সে প্রস্তুতি চলছে। তবে তার আগেই এত বেশি হারে শুল্ক্কারোপ করায় বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি পাটকল মালিকরা।