মাতৃত্বকালে বিভিন্ন অজুহাতে নারী গার্মেন্ট শ্রমিকদের একটি বড় অংশকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার কারখানাগুলোতে বিনা নোটিসে শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছেন। একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। বুধবার মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত রাজধানীর গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে “তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের অবস্থা ও অধিকার” শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল এইচ হাসান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু।
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ৭৭০ শ্রমিকের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার এ্যান্ড রাইট’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়, মাতৃত্বকালে ঢাকার শ্রমিকদের ১৭ দশমিক ২০ এবং গাজীপুরে ৮২ দশমিক ০৮ শতাংশ চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের ১৩ দশমিক ৮০ এবং নারায়ণগঞ্জের ৮৬ দশমিক ২০ শতাংশ নারীকে মাতৃত্বকালে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিলেও ভাতা দেয়া হয় না। উল্টো এ সময়ে নানা অজুহাতে তাদের চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়াতে উৎসাহ দেয়া হয়। তবে প্রতিষ্ঠান এ সময় পরে আবার চাকরিতে ফিরিয়ে নেয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কারখানাগুলোতে নারী শ্রমিকদের গালিগালাজ শোনা নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়। কর্মক্ষেত্রে মিড লেভেলের কর্মচারীদের দ্বারা মারধরেরও শিকার হতে হয় নারীদের। শুধু তাই নয়, চাকরি হারানোর ভয়ে যৌন হয়রানির বিষয়গুলো এড়িয়ে যান নারীরা। নারী শ্রমিকের মতোই একইভাবে বিনা নোটিসে ঢাকা ১৩ দশমিক ৮০ এবং গাজীপুরে ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং নারায়ণগঞ্জের ৩৪ দশমিক ৬০ শতাংশ শ্রমিককে বিনা নোটিসে চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নিম্নমানের গার্মেন্ট শ্রমিকদেরও উচ্চ ভাড়ার বাসা-বাড়িতে বাস করতে হয়। অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে ছোট পরিবারের সদস্যরা একটি ঘরে ঠাসাঠাসি করে জীবনযাপন করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অধিকাংশ শ্রমিকদের নিয়োগপত্র নেই। পাশাপাশি ৫০ শতাংশ শ্রমিককে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন দেয়া হয় না। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়, ঢাকা ও গাজীপুরে ৫ শতাংশ এবং নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে ১০ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আওতায় রয়েছেন। ফলে তারা নিজেদের অধিকার আদায় করতে পারছেন না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুন্নু বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের উন্নয়নেও সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে ভেদাভেদ নেই। সবারই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ দেশের শ্রমিকরা যুগ যুগ ধরে অনেক সংগ্রাম করে, আন্দোলন করে তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। তাদের যে অধিকার তারা সেই অধিকার থেকে কখনও বঞ্চিত হবে না।
কিছু মালিকপক্ষের কারণে এসব শ্রমিক বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু অনেকেই মানেন না। আর যারা মানেন না তাদের জন্য শাস্তির বিধানও রয়েছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল এইচ হাসান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ ওয়েজ বোর্ডের সদস্য শামসুন্নাহার ভুঁইয়া এবং বিআইএলএসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এমজেএফের পরিচালক রীনা রায়।