চামড়া শিল্প শ্রমিকদের জন্য নতুন করে ন্যুনতম মজুরি ঘোষণা করেছে সরকার। এখন থেকে এ খাতের শ্রমিকদের ন্যুনতম মোট মজুরি ১৩ হাজার ৫শ’ টাকা। এটি বর্তমান মজুরির চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। এ খাতের শ্রমিকদের জন্য ৫টি গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে। আলোচ্য মজুরি প্রযোজ্য হবে পঞ্চম বা সর্বনিম্ন গ্রেডের জন্য। অদক্ষ শ্রমিকরাও এই গ্রেডের মজুরি পাবে। আর প্রথম গ্রেডের শ্রমিকদের মোট মজুরি হবে ২৫ হাজার ৪শ’ টাকা। এছাড়া প্রতি বছর মূল মজুরির উপর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হবে। এতদিন কাগজে-কলমে পাঁচটি গ্রেড থাকলেও কার্যকর হতো মূলত চারটি গ্রেড। অদক্ষ বা কম দক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মজুরি বোর্ড বাস্তবে কার্যকর হতো না।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ট্যানারি শ্রমিকদের নতুন নিম্নতম মজুরির এ গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। নতুন মজুরি কাঠামোকে শ্রমিকরা ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে বললেও মালিকপক্ষ এর বিরোধিতা করছে। ইতিমধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশ্ড লেদার, লেদারগুড্স এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ)।
সরকার ঘোষিত সর্বশেষ গ্রেড অনুযায়ী, অদক্ষ বা সাধারন শ্রমিকদের বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য দুটি ভাগ করা হয়েছে। বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার শ্রমিকদের ক্ষেত্রে মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া ৪ হাজার ৯শ’, চিকিত্সা ভাতা ১ হাজার ও যাতায়াত ভাতা ৬শ’ – অর্থাত্ সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৫শ’ টাকা মোট মজুরি। এই গ্রেডে এর বাইরের এলাকার শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়া ভাতা কিছুটা কমিয়ে ৪ হাজার ২শ’ টাকা ছাড়া মূল বেতন ও অন্যান্য ভাতা ঠিক রাখা হয়েছে। সেই হিসেবে মোট মজুরি দাঁড়াবে ১২ হাজার ৮শ’ টাকা।
এছাড়া গ্রেড ১ এ (বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার জন্য) মোট মজুরি ২৫ হাজার ৪শ’ টাকা, গ্রেড ২ এ ২১ হাজার ১৫০, গ্রেড তিন এ ১৭ হাজার ৯২০ ও গ্রেড চারে মোট মজুরি ১৫ হাজার ৭১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি একই হারে ট্যানারির কর্মচারিদের বেতনও নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন এ মজুরির বিষয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের দাবি আরো বেশি ছিল। তবে যে মজুরি নির্ধারণ হয়েছে, তা মন্দের ভালো। অবশ্য এই মজুরি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, যদি মালিকপক্ষ কোন ষড়যন্ত্র করে বাস্তবায়ন না করে, তাহলে শ্রমিকরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
অন্যদিকে এর বিরোধিতা করে বিএফএলএলএফইএ’র সাবেক সভাপতি টিপু সুলতান ইত্তেফাককে বলেন, ট্যানারি শিল্পের বর্তমান বাস্তবতায় এ মজুরি বাস্তবায়ন কার্যত অসম্ভব। বিএফএলএলএফইএ’র বর্তমান সভাপতি মাহিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই একতরফাভাবে এ মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। এটি হাস্যকর। আমরা ইতিমধ্যে আপত্তি জানিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
সূত্র জানায়, এ খাতে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। আগে ৩০ হাজারের মত শ্রমিক কাজ করলেও ট্যানারি স্থানান্তর ইস্যুতে অনেকেই কাজ ছেড়ে দেন। এসব শ্রমিকদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করা শ্রমিক সংগঠন মূলত ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। এর আগে এ পর্যন্ত তিন দফা সরকার মজুরি বোর্ড গঠন করলেও কার্যকর হয়েছে মাত্র একবার। মূলত ট্যানারি মালিক ও শ্রমিক সংগঠন মিলে দুই বছরের জন্য মজুরি বাড়ানোর চুক্তি করতো। প্রতি দুই বছর অন্তর তা পুনর্গঠন করা হতো। এভাবেই এতদিন এ খাতের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হতো।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবশ্য ওই মজুরিও সব মালিকপক্ষ বাস্তবায়ন করতো না বলে অভিযোগ রয়েছে। কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে বাড়তি মজুরি দিলেও ৮ ঘন্টার স্থলে ১২ ঘন্টা কাজ করতে হতো। অর্থাত্ একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে চলতো এ খাত।