Home Bangla Recent ন্যূনতম শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের নতুন সীমা হচ্ছে

ন্যূনতম শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের নতুন সীমা হচ্ছে

শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে এতদিন ন্যূনতম ৩০ শতাংশ সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। তবে সদস্য সংখ্যার এ ন্যূনতম সীমায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শ্রমিকের সংখ্যাভেদে ন্যূনতম সদস্য সংখ্যার দুটি স্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে দুই স্তরে যথাক্রমে ন্যূনতম ২৫ ও ২০ শতাংশ সদস্য থাকলেই চলবে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক ও স্থায়ী শ্রম অধিকার সংস্থার দাবির মুখে গত বছরের মধ্যভাগে শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। সংশোধনীর খসড়ায় ট্রেড ইউনিয়নসহ আরো বেশকিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইন সংশোধনীর খসড়ায় থাকা নতুন বিষয়গুলো সম্পর্কে গত আগস্টে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকে (আইএলও) জানানো হয়। সম্প্রতি সংশোধনীর বিষয়ে নিজস্ব মতামত জানিয়েছে আইএলও। সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সদস্যসীমার বিষয়ে মতামত দিয়েছে সংস্থাটি।

সূত্রমতে, আইএলওর মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই সরকার ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সদস্যসীমায় পরিবর্তন এনেছে। সেখানে শ্রমিকের সংখ্যাভেদে মোট দুটি স্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংখ্যা এক থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত হলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ন্যূনতম সদস্য থাকা লাগবে ২৫ শতাংশ। আর কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি হলে ন্যূনতম ২০ শতাংশ সদস্য থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সদস্যসীমায় পরিবর্তন আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে আমরা দুই স্তরের প্রস্তাব করব। পাঁচ হাজার পর্যন্ত শ্রমিক সংখ্যায় ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকদের প্রতিনিধি থাকতে হবে ন্যূনতম ২৫ শতাংশ। আর শ্রমিক সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি হলে প্রতিনিধি থাকতে হবে ন্যূনতম ২০ শতাংশ।

গত বছরের মধ্যভাগে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে চারটি স্তরের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী, এক থেকে দুই হাজার শ্রমিকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত ২৭ শতাংশ, পাঁচ থেকে সাড়ে সাত হাজার শ্রমিকের ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ ও সাড়ে সাত হাজারের বেশি শ্রমিকের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ন্যূনতম প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করা হয়।

আইন সংশোধনের খসড়া ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আইএলওর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়, খসড়ায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ আমলে নেয়া হয়নি। ইউনিয়ন গঠনে সদস্যসীমা সামান্য কমানো হলে বড় কারখানায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তাই প্রস্তাবটি স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে তেমন ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে জানায় আইএলও।

জানা গেছে, শ্রমিক প্রতিনিধিরা অনেক আগে থেকেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ৩০ জন সদস্য থাকার বাধ্যবাধকতা কমিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে সংশোধিত শ্রম আইন, ২০১৩ প্রণয়নের সময় দাবিটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। গত বছর শ্রমিক অসন্তোষ-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দাবির সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আনার দাবিটি আবারও সামনে আসে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে (আইএলসি) এ দাবি জোরালোভাবে উঠে আসে। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করে আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

সূত্রমতে, আইএলসিতে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছিল, তার অন্যতম ছিল আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশে শ্রম আইন ও বিধিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। বিশেষ করে এ-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন আমলে নেয়ার সুপারিশ করে আইএলও বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ প্রেক্ষাপটেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিক সদস্য সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিদ্যমান শ্রম আইনের ধারা ১৭৯-এর ২ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন ততক্ষণ নিবন্ধনের জন্য বিবেচিত হবে না, যতক্ষণ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিক সংখ্যার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ এর সদস্য না হয়। সম্ভাব্য সংশোধিত শ্রম আইনে এ ধারাতেই পরিবর্তন আসবে।

ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে আনার বিষয়টির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাবই আছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক প্রতিনিধিরা। তবে সার্বিকভাবে উদ্যোগটি ইতিবাচকই বলে তাদের মত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here