বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে নারী কর্মীদের পদোন্নতিতে পিছিয়ে থাকার জন্য তাদের দায়িত্ব গ্রহণে অনাগ্রহ প্রধান কারণ হিসেবে বেরিয়ে এসেছে এক গবেষণায়।ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এই গবেষণায় বাংলাদেশের নারীপ্রধান তৈরি পোশাকশিল্পে নেতৃত্বে নারীদের পিছিয়ে থাকার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার অভাবের বিষয়টিও এসেছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় কেয়ার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা : পেশাগত উন্নয়নে সাফল্য ও গতিশীলতা’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে নিজেদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন আইএফসির কর্মকর্তা নাবিরা রহমান।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণে অনাগ্রহের কারণে ৩১ দশমিক ০৩ শতাংশ নারীকর্মীর পদোন্নতি হয় না।’
শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবে ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ, দক্ষতার অভাব এবং কর্মস্থলের পরিবেশ পছন্দ না করার কারণে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ নারীকর্মী পদোন্নতি পান না বলে আইএফসি গবেষণায় দেখা গেছে।
নাবিরা বলেন, দীর্ঘক্ষণ কাজ না করার কারণে ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ নারীকর্মীর পদোন্নতি হয় না।
৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারীকর্মী পদোন্নতির প্রয়োজনই মনে করেন না বলে এই গবেষণার বেরিয়ে এসেছে।
‘এসব কারণে তারা কর্মক্ষেত্রে কর্তৃত্বে পিছিয়ে রয়েছেন,’ বলেন নাবিরা।
বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের ৪০ লাখের মতো কর্মীর অধিকাংশই নারী। তবে এই শিল্পে গুরম্নত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারী অনেক কম রয়েছে।
কেয়ার অনুষ্ঠানে আলোচকরা তৈরি পোশাক খাতে নারীদের পেশাগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং সেগুলো দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে ‘জেন্ডার এক্সপার্ট’ হিসেবে অংশ নেয়া শামীমা পারভীন বলেন, ‘পোশাক খাতে সংখ্যায় বেশির ভাগ নারীকর্মী হলেও তারা নানা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। কারখানায় সুপারভাইজার পদে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের বিবেচনায়ই নেয়া হয় না, তাদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেই।’
অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা শারমিন বেনু, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ শামীম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ আলোচনা করেন।
কেয়ার বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নবিষয়ক পরিচালক হুমায়রা আজিজ বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ খাতের কর্মীদের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থাকলেও সেগুলোর সুবিধা নারীরা নিতে পারছেন না। কারণ এসব প্রশিক্ষণ নিতে নারীদের যেসব সুবিধা দরকার, যেমন: অর্থনৈতিক সুবিধা, সুবিধাজনক সময়, প্রশিক্ষণের সুবিধাজনক স্থান, তা তাদের জন্য সহায়ক নয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইউএন উইমেন ও কালারস অব বেনটনের আর্থিক সহায়তায় পোশাক খাতে নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষায় একটি প্রকল্প বাস্ত্মবায়ন করেছে কেয়ার।
প্রকল্পটিতে ৩০০ জন নারী কর্মীকে জীবন দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, সুপারভাইজারদের ‘লিঙ্গ সংবেদনশীলতার’ ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে ‘সুরক্ষা’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে, যা পোশাক কারখানায় কর্মরত সুপারভাইজার ও ব্যবস্থাপকদের যৌন নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা দক্ষতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে পারে বলে কেয়ারের কর্মকর্তারা দাবি করছেন।