রাজধানীসহ সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বাইরে স্থানান্তর করা হচ্ছে ৬০ পোশাক কারখানা। দুই ক্রেতা জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে এসব কারখানা স্থানান্তরের শর্ত অনেক আগের। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বন্ধ। আর কিছু কারখানা আংশিক চালু রয়েছে। এসব কারখানা পুরোদমে প্রাণ ফিরে পাবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাকপল্লী নির্মাণ হলে। কেননা এ কারখানাগুলোকে সেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কম-বেশি ৫০০ কারখানা থাকছে এ পল্লীতে। ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধাসহ একটি মডেল পোশাকপল্লী গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থানের সুবিধায় এ পল্লীর কারখানাগুলো রফতানিতে লিড টাইম (রফতানি আদেশ পাওয়ার পর ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানো পর্যন্ত সময়) সুবিধা পাবে। রফতানিতে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা লিড টাইম। উদ্যোক্তাদের ধারণা, পোশাকপল্লীতে উৎপাদন শুরু হলে রফতানি খাতে আরও অন্তত ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বিজিএমইএর মধ্যে আলোচনা অনুযায়ী এরই মধ্যে ভূমি উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সেবার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে পোশাকপল্লী থেকে উৎপাদন শুরুর আশা করা হচ্ছে।
বেজা ও বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাই পোশাকপল্লী ইজারা ভিত্তিতে ৫০ বছরের জন্য উদ্যোক্তাদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে। আপাতত ৫০০ একর নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। তবে দুই হাজার একর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতিটি প্লট হবে কমপক্ষে এক একর। একরপ্রতি মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা। সহনীয় কিস্তিতে এ অর্থ পরিশোধ করা যাবে। মোট মূল্যের ২৫ শতাংশ বুকিংমানি হিসেবে বিজিএমইএর তহবিলে জমা দিয়েছেন উদ্যেক্তারা। আজ চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ভূমির মূল্য বাবদ ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে বেজাকে। রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে বেজা ও বিজিএমইএর মধ্যে এ চুক্তি সই হবে। এ চুক্তিকে ‘সমঝোতা চুক্তি’ বলা হলেও আসলে মূল চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করছেন সংশ্নিষ্টরা। এ কারণেই সরাসরি মূল্য গ্রহণ করা হচ্ছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কমপ্লায়েন্স শর্তের বাইরেও বেজার নিজস্ব কমপ্লায়েন্স শর্ত প্রতিপালন করতে হবে পোশাক পল্লীর কারখানাগুলোকে। বেজার পরামর্শক আবদুল কাদের জানিয়েছেন, পোশাকপল্লীর কারখানাগুলো হবে বিশ্বমানের। দুই ক্রেতা জোটের শর্তের চেয়ে আরও নিরাপত্তামূলক শর্ত প্রতিপালন করতে হবে পোশাকপল্লীর কারখানাগুলোকে। বিশ্বের মডেল কারখানা হিসেবে যাতে বিদেশি ক্রেতাদের সমিহ আদায় করা যায়। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দেশের পোশাক শিল্প এখনও সম্ভাবনাময়। অন্তত আরও ২০ বছর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাকের দাপট বজায় থাকবে। এতে ব্যাপক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ হবে। এসব বিবেচনায় পোশাক খাতকে সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতা দিতে চায় বেজা। তিনি বলেন, বন্দর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে মিরসরাইতে পোশাকপল্লীর অবস্থান। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির সমকালকে বলেন, দুই ক্রেতা জোটের পক্ষ থেকে যেসব কারখানাকে স্থানান্তরের শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে পোশাকপল্লীতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে ছোট এবং ছোট ও মাঝারি কারখানাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তারা।
গত দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে পোশাকপল্লী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ার বাউসিয়া মৌজায় পোশাকপল্লী নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত জমির মূল্য এবং ভরাট বাবদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লাভজনক হবে না বলে সব পক্ষই প্রকল্পটি থেকে সরে আসে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নতুন করে জায়গা চান। এরই ধারাবাহিকতায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাকপল্লী করা হচ্ছে।