Home Bangla Recent দেশের ১৬ ভাগ পোশাক কারখানায় উচ্চ পদে বিদেশীরা

দেশের ১৬ ভাগ পোশাক কারখানায় উচ্চ পদে বিদেশীরা

দেশে তৈরী পোশাকশিল্পের ১৬ ভাগ কারখানায় বিদেশীরা উচ্চ পদে উচ্চ বেতনে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে প্রোডাকশন প্ল্যানিংয়ে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ, মার্চেন্টডাইজিংয়ে ২০ দশমিক ১ শতাংশ ও কোয়ালিটি অ্যাসুয়ারেন্সে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ওয়াশিং সেক্টরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ বিদেশী কাজ করছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পোশাক শিল্প নিয়ে প্রকাশিত গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। ১৯৩টি কারখানার ২ হাজার ২৭০ জন কর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, প্রতিষ্ঠানের রিসার্চ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক শ্রমসচিব মিকাইল শিপার, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম, শ্রমিক নেতা বাবুল আকতার ও সামসুন নাহার।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার বছরে পোশাক খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। বিপরীতে ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ওই হিসেবে চার বছরে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার কমেছে দশমিক ৭১ শতাংশ। সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারতন্ত্রে পরিচালিত বোর্ডের হার শতকরা ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডের বেশির ভাগই একই পরিবারের সদস্য। পোশাক খাতে পুরুষ ও নারীর মজুরির ক্ষেত্রে গড়ে তিন শতাংশ বেতন বৈষম্য রয়েছে। পুরুষদের গড় বেতন ৭ হাজার ২৭০ টাকা। অন্য দিকে নারীদের গড় বেতন ৭ হাজার ৫৮ টাকা। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশে পোশাক খাতে সামাজিক অগ্রগতি হলেও অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি পিছিয়েছে। এ সময় নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য কমেছে। তবে নারীদের কর্মসংস্থানের হার কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তি ব্যবহারে বড় কারখানাগুলো এগিয়ে রয়েছে। ছোট কারখানাগুলো আরো পিছিয়েছে। এ ছাড়া প্রযুক্তি ব্যবহারে পুরুষের তুলনায় নারীরা পিছিয়ে আছে। তবে ট্রেড ইউনিয়নের অবস্থা দুর্বল হলেও শ্রমিক সংগঠনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।

রেহমান সোবহান বলেন, পোশাক শিল্পের এ সম্ভাবনা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এ খাতে শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে ঐক্য না থাকায় তারা তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারছে না। পোশাক শিল্পে ৭০টির বেশি সংগঠন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিভক্তি থাকায় ন্যায্য দাবি আদায় হচ্ছে না।

পোশাক খাতের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ খাতের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ডেকে সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, এতে তারা বাংলাদেশের পোশাক খাতে আরো বেশি বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প যে একটি যুগান্তরকারী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং সেটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছেÑ এই গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, এ খাতে যে কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে, প্রযুক্তির নতুন যুগে প্রবেশ এবং আকারের যে পরিবর্তন হয়েছে; এসব বিষয় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এতে পোশাক শিল্প নিয়ে নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একই সাথে বলা যায়, এ পরিবর্তনটা অশুভভাবে হয়েছে। সামাজিকভাবে এ পরিবর্তন যতটা হয়েছে; অর্থনৈতিকভাবে ততটা হয়নি। কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক পরিবর্তন না এলে সামাজিক পরিবর্তনটা ধরে রাখা যাবে না।

তিনি বলেন, রানা প্লাজা উত্তর পরিস্থিতে ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠান কারখানা পরিবর্তন করলেও এখনো ১২ শতাংশের মতো পুরনো ভবনে রয়েছে। অন্য দিকে ১৬ শতাংশের মতো বিদেশী কর্মকর্তা এ খাতে কাজ করছেন। তারা অত্যন্ত উচ্চ বেতনে কাজ করছেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ হাজার উচ্চ শিক্ষিত প্রশিক্ষিত লোক বের হচ্ছে। কিন্তু পোশাক খাতে চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় বিদেশী কর্মকর্তারা এখানে কাজ করছেন।

সাবেক সচিব মিকাইল শিপার বলেন, বর্তমানে দেশে ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা ভালো দিক। কারণ এসব কারখানায় কমপ্লায়েন্স মানা হতা না।

শ্রমিক নেতা বাবুল আকতার বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ভারত ও শ্রীলঙ্কার অনেক আপনা আপনি কাজ করছেন। তারা অনেক টাকা এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here