ভয়াবহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনাটি পৃথিবীর শিল্প ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছে। কারখানা ও ভবন মালিকের অবহেলায় ওই দুর্ঘটনায় মারা যান ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক। আহত হন আরো ১ হাজারের অধিক। যাদের অনেকে এখনো পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার মুখে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত দুটি জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কারখানার সংস্কার কাজ তদারক করছে।
পাঁচ বছর শেষে প্রশ্ন এসেছে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা শ্রমিকদের জন্য কতটুকু নিরাপদ হয়েছে? বিভিন্ন পক্ষের উদ্যোগে গার্মেন্টস কারখানা এর আগের চেয়ে অনেক অগ্রগতি করেছে – এটি সত্য। কিন্তু দুর্ঘটনা কিংবা হতাহতের বিবেচনায় এখনো ঝুঁকিমুক্ত হয়নি এ খাতটি। সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) হিসাব অন্তত তাই বলছে। ২৩০টি কারখানা এখনো কোন ধরনের সংস্কার কাজই শুরু করেনি। অর্থাত্ কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার বিচারে এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব কারখানা। রানা প্লাজা ধসের ৫ বছর পরও ২৩০টি ঝুঁকির মধ্যে থেকে যাওয়া সরকারের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ।
ডিআইএফই’র মহাপরিদর্শক শামসুজ্জামান ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, এই কারখানাগুলো কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে আছে। এসব কারখানার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এসব কারখানাকে সংস্কার সম্পন্ন করা কিংবা সংস্কার পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর পর করণীয় ঠিক করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধান চাইবো। এরপর আইনের চূড়ান্ত প্রয়োগে (বন্ধ করে দেওয়া) যাবো। কেননা একটি কারখানার সমস্যা পুরো খাতের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের দাবি, বাংলাদেশ এখন নিরাপদ গার্মেন্টস কারখানার রোল মডেল।
পাঁচ বছরেও হয়নি ক্ষতিপূরণের স্থায়ী নীতিমালা
বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী, গার্মেন্টসসহ যে কোন কারখানায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১ লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণে এই অর্থ একেবারেই নগণ্য বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতারা। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর এ খাতের শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের স্থায়ী নীতিমালার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি আজও।