Home Bangla Recent সর্বনিম্ন মজুরি: শ্রমিকরা চান ১৬ হাজার, মালিকরা ১০

সর্বনিম্ন মজুরি: শ্রমিকরা চান ১৬ হাজার, মালিকরা ১০

ছয় শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা সর্বনিম্ন বেতন দাবি করছেন ১৬ হাজার টাকা। তবে গার্মেন্টস কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকার ওপরে উঠতে চায় না। এ ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার গঠিত সর্বনিম্ন মজুরি বোর্ড। জানা গেছে, এই বোর্ড এখন পর্যন্ত মাত্র একটি সভা করতে পেরেছে। গত ২৫ এপ্রিল মজুর বোর্ডের সভা নির্ধারিত থাকলেও অনিবার্য কারণে তা হয়নি। বোর্ডের পরবর্তী সভা কবে হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন মজুরি বোর্ডের একজন সদস্য। তবে বোর্ডের মালিক প্রতিনিধি তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এ নিয়ে তাড়াহুড়ার কিছু নেই। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যেই সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করা যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের তৈরি পোশাক (গার্মেন্টস), গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেট, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, বেকারি বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি, অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল এবং সিকিউরিটি সার্ভিস এই ছয় খাতের শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজের নেতৃত্বে সর্বনিম্ন মজুরি বোর্ড গঠন করেছে সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত অস্থায়ী কার্যালয়ে একটি সভাও করেছে নবগঠিত মজুরি বোর্ড। যদিও ওই সভায় বেতন বা মজুরি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এরই মধ্যে ছয়টি শিল্প খাতের শ্রমিকদের বেতন কতো হবে, কী কী সুবিধা শ্রমিকরা পেতে পারেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন এসব খাতের মালিক ও শ্র্রমিক প্রতিনিধিরা।

জানা গেছে, শ্রমিকরা তাদের সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার টাকা দাবি করছেন। সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। তবে সরকার বা মজুরি বোর্ড এই ছয় খাতের শিল্পের শ্রমিকদের জন্য সর্বনিম্ন বেতন সর্বমোট ১০ হাজার টাকার ওপরে ওঠাতে চায় না। এই লক্ষ্যেই কাজ করছে মজুরি বোর্ড। সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও সরকার গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ড সূত্রে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মজুরি বোর্ড আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগেই, অর্থাৎ ৩০ জুনের মধ্যে তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করে তা সরকারের কাছে জমা দিতে চাচ্ছে। তবে আপত্তি করছেন বিজিএমইএ নেতারা। তারা বলছেন, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাতে সময় আছে। তাহলে কেনও এই তড়িঘড়ি। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশসহ চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিলেই হবে।

শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার নিম্নতম মজুরি ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন করতে চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই। দেশের এই ছয় শিল্পে নিয়োজিত বিশাল সংখ্যক শ্রমিকদের সমর্থন আদায়ে সরকার এই কৌশল নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই ছয় শিল্পের সংশ্লিষ্টরা নিজেদের শিল্পের শ্রমিকদের জন্য নূন্যতম মজুরি কতো হবে, তাদের কী কী সুবিধা দেওয়া যায় বা সরকারের কাছে কী কী সুবিধা চাওয়া যায় তা নির্ধারণে বৈঠক করেছেন। এর অংশ হিসেবে গত ৩ মার্চ বৈঠক করেছেন বেকারি বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশানারি শিল্পের কর্মকর্তারা। ৪ মার্চ বৈঠক করেছেন গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেট শিল্পের কর্মকর্তারা। ১৯ মার্চ বৈঠক করেছেন তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মকর্তারা। ২০ মার্চ বৈঠক করেছেন সিকিউরিটি সার্ভিস খাতের কর্মকর্তারা। ২১ মার্চ বুধবার বৈঠক করছেন অটোমোবাইল ওয়ার্কস শিল্পের কর্মকর্তারা। ২৭ মার্চ শেষ বৈঠক করেছেন অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্ড এনামেল শিল্পের কর্মকর্তারা।

ইতোমধ্যেই সব শিল্পের শ্রমিক নেতারা একত্রিত হয়ে সর্বনিম্ন বেতন কতো হবে এবং কী কী সুযোগ-সুবিধা চাওয়া হবে তা মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছেন। ঠিক করে এর একটি প্রস্তাবও তারা মজুরি বোর্ডের কাছে পেশ করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক সংগঠন উল্লেখযোগ্য। একাধিক সংগঠনের একটি জোট হয়ে তারা একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর। স্মারকলিপিতে তারা তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মূল বেতন ১০ হাজার টাকাসহ মোট ১৬ হাজার টাকা দাবি করেছেন। এর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি হবে ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, স্থায়ীভাবে রেশনিং ব্যবস্থা চালু, ভেরিয়েবল ডিএ, কন্ট্রিবিউটর প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।

তবে এ জোটের বাইরে থাকা পৃথক সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনমান বিবেচনায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য এটি নির্ধারণ করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

উল্লেখ্য, দেশের পোশাক শিল্পের মজুরি কাঠামো সর্বশেষ পর্যালোচনা হয় ২০১৩ সালে। সেই বছর ন্যূনতম মজুরি হার নির্ধারণ হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরে নতুন মজুরি কাঠামোর ঘোষণা দেওয়া হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর পরপর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হবে বলে আইনে বলা হয়েছে। যা ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান (অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ) সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘যে সব দাবি আসবে তা একত্রিত করে পর্যালোচনা করা হবে। সব কিছু বিচার বিবেচনা করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি হবে।’

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে সর্বনিম্ন বেতন কতো হবে। অবশ্যই যা ঘোষণা করা হবে তা বাস্তবায়নের সক্ষমতাও থাকতে হবে। শিল্প সক্ষমতা এবং শ্রমিকদের প্রয়োজনীয়তা এই দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা সে ধরনের একটি বেতন কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করছি।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পোশাক খাতের মজুরি পর্যালোচনায় নিম্নতম মজুরি বোর্ড ঘোষণা করা হয়। বোর্ড গঠনের তিন মাস পর গত ১৯ মার্চ ওই বোর্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বেতন কাঠামো নিয়ে ততটা গুরুত্ব দিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।

তিনি জানান, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে বিদ্যমান শ্রম আইন এবং বিধিতে যে সমস্ত বিধান আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা ও অসুবিধা তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২৫ এপ্রিল নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ওই বৈঠকের আগে সংশ্লিষ্টদের নিজেদের পক্ষে থাকা বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও সুপারিশ, পরামর্শ, অনুরোধ কিছু থাকলে তা জানানোর জন্য বলা হয়েছিল। সেই মোতাবেক মালিক ও শ্রমিকরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কিছু দাবি ও সুপারিশ বোর্ডের কাছে জমাও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে বোর্ড সূত্র বরাবরই এ সম্পর্কে কিছু জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, গত ১৯ মার্চের সভায় জাতীয় শ্রমিক লীগের নারী বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারের হাতে কিছু নাই। মজুরি বোর্ডের সপারিশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন কাঠামো ঠিক করা হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার বরাবরই শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়। তবে শিল্প না বাঁচলে মালিক বাঁচবে না, সেদিকটিও মনে রাখতে হবে। এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা মালিকদের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অপরদিকে এমন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করাও উচিত হবে না, যা দিয়ে একজন শ্রমিক তার পরিবার পরিজন নিয়ে নূন্যতম জীবনযাপন করাও কষ্টসাধ্য হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here