বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে পাটসুতা প্রাধান্য বজায় রেখে চলছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পাটপণ্য রফতানি হয় তার ৬৭ শতাংশই ছিল পাটসুতা। ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ছয় লাখ ৭১ হাজার ৮৪৭ টন পাটসুতা রফতানি হয়। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশনে সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে দেশের পাটশিল্প মোট ৬৬ লাখ নয় হাজার বেল কাঁচাপাট ব্যবহার করে নয় লাখ ৯৬ হাজার টন পাটপণ্য উৎপাদন করেছে। এরমধ্যে কাঁচাপাট ও পাটপণ্য রফতানি করে মোট আট হাজার ১৩২ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পাটকলের সংখ্যা বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) আওতাভুক্ত ৯৪টি। এরমধ্যে চালু ৮২টি এবং ১২টি মিল বন্ধ আছে। বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে ২৬টি জুট মিল রয়েছে। বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সদস্যভুক্ত ছোটবড় মিলের সংখ্যা ১৬৫টি। এরমধ্যে বন্ধ আছে ৪২টি। সব মিলিয়ে দেশে মোট ২৮৫টি পাটকল রয়েছে এবং এর মধ্যে মোট বন্ধ মিলের সংখ্যা ৫৪টি।
পাটপণ্য রফতানির পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিজেএসএর আওতাভুক্ত মিলে পাটসুতা রফতানির পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৭০৫ টন এবং আয় হয়েছে চার হাজার ৩৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পূর্ববর্তী বছরে এই রফতানির পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৩৩৪ টন এবং আয় ছিল চার হাজার ২৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত অর্থবছরে মোট পাটসুতা উৎপাদিত হয় পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩২ টন এবং মজুদ ছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৭৫০ টন। এ বছর বিজেএমসির মিলসমূহে মোট পাটপণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ৮৭ হাজার ৭৯২ টন এবং আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৮৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার ২১৭ টন এবং আয় হয়েছিল ৬৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে বিজেএমসির রফতানি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ দশমিক ০২ শতাংশ এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, ওই অর্থবছরে মোট পাটপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার টন এবং স্থানীয় বিক্রি ছিল ২৯ হাজার ১৪ টন। ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত বিজেএমসির উৎপাদিত পাটপণ্যের মজুদ ছিল ৫০ হাজর ৯২৪ টন।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিজেএমএর মিলসমূহের পাটপণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯৯ হাজার ৫৭ টন এবং আয় হয়েছিল এক হাজার ৬২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর পূর্বের বছরে রফতানির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ২৪০ টন এবং আয় হয়েছিল এক হাজার ৪৫১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এবছর রফতানি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিজেএমএ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যে পরিমাণ পাটপণ্য রফতানি করেছে তার মধ্যে পাটসুতা রফতানির পরিমাণ ছিল এক লাখ ১২ হাজার ১৮৯ টন এবং আয়ের পরিমাণ ৮২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা । গত অর্থবছরে বিজেএমএ মোট পাটপণ্য উৎপাদন করেছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ২২০ টন এবং স্থানীয় বিক্রয় ছিল ৬৯ হাজার ৯২৫ টন। উল্লেখ্য, ওই অর্থবছরে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মজুদ ছিল ৮৮ হাজার ৯৮৭ টন।
গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) বিজেএসএ (৫,৫৮,৭০৫ টন), বিজেএমসি (৯৫৩ টন) এবং বিজেএমএ (১,১২,১৮৯ টন) মিলিয়ে বাংলাদেশ হতে মোট পাটসুতা রফতানির পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ৭১ হাজার ৮৪৭ টন। অন্যদিকে ওই অর্থবছরে ভারত হতে পাটসুতা রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৩০০ টন। বিজেএ সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের কাঁচাপাট রফতানির পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৩৯ হাজার বেল। আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৪২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাঁচাপাট রফতানির পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭৮ হাজার বেল। আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কাঁচাপাট রফতানি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ কাঁচাপাট ও পাটপণ্য রফতানি করে মোট ৮১৩২ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে পাটসুতা শিল্প খাত তথা বিজেএসএর মিলসমূহ ৪০ লাখ ১০ হাজার বেল কাঁচাপাট ক্রয় করে। এরমধ্যে মিলগুলো ব্যবহার করে ৪১ লাখ ৬৫ হাজার বেল এবং মজুদের পরিমাণ ছিল ছয় লাখ ১২ হাজার বেল। বিজেএমএর আওতাভুক্ত মিলসমূহের পাট ক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১৯ লাখ ৪৮ হাজার বেল। ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ১০ হাজার বেল এবং মজুদের পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার বেল। বিজেএমসির আওতাভুক্ত মিলে পাট ক্রয়ের পরিমাণ ৯ লাখ ৫০ হাজার বেল। এর মধ্যে ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩৪ হাজার বেল এবং মজুদের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার বেল। সবমিলিয়ে গত অর্থবছরে দেশের পাটশিল্প মোট ৬৬ লাখ ৯ হাজার বেল কাঁচাপাট ব্যবহার করে ৯ লাখ ৯৬ হাজার টন পাটপণ্য উৎপাদন করে।
দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বাধিক পাটসুতা রফতানি হয় তুরস্কে। রফতানির পরিমাণ ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৯৫ টন, যা মোট রফতানির ৩৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়া মোট পাটপণ্য রফতানির মধ্যে চীনে ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং ভারতে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ রফতানি হয়। তবে ভারত বাংলাদেশ হতে পাটপণ্য আমদানির ওপর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি হতে ‘এন্টি ডাম্পিং ডিউটি’ আরোপের ফলে পাটসুতা রফতানির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং এ কারণে ভারতে পাটসুতা রফতানি হ্রাস পেয়ে চলেছে। এছাড়া, ইরানে রফতানির হয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, মিসরে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়াতে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।