Home Bangla Recent শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা চায় চামড়াশিল্প

শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা চায় চামড়াশিল্প

সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ব্যবসায়ীদের শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন চামড়াশিল্প সংগঠনের নেতারা। একই সঙ্গে ওই স্থানকে বন্ডেড ওয়্যারহাউস ঘোষণা এবং চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কেমিক্যাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ দাবি জানানো হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা), বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্টার্চ অ্যান্ড ডেরিভেটিভস ম্যানুফ্যাকচারার্সসহ ১২টি সংগঠনের নেতারা।

আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী বাজেটে করপোরেট করহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এ করহার কমানো হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আসবে এবং রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘সবাই যদি করহার ছাড় চায় তবে সরকার চলবে কিভাবে। শুধু বড়দের নয়, ছোটদেরও সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য ছোট-বড় উভয়ের জন্য সুযোগ রেখে সমন্বয় করে বাজেট করা হবে। সব দিক বিবেচনা করে দেশে শিল্পায়ন উৎসাহিত করতে বাজেট করা হবে।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, অনেক ব্যবসায়ী কোনো কোনো খাতে নতুনভাবে শূন্য ভ্যাট নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। তা সম্ভব হবে না। তবে বর্তমান অবস্থা থেকে কিছুটা কমানো হবে। আবার অনেক জায়গায় এটা বাড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আসছে বাজেটে দেশি শিল্পে গুরুত্ব দেওয়া হবে। নতুন শিল্প না হলে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তবে কৃষি খাতকেও সমান গুরুত্ব দিতে চাই। এ জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবসায় আগামী বাজেটে যথেষ্ট সুবিধা দেওয়া হবে।’

বৈঠকে বিটিএর চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বর্তমানে চামড়া খাতে ভয়াবহ সমস্যা বিরাজ করছে জানিয়ে বলেন, ট্যানারি স্থানান্তরের ফলে বিভিন্ন সমস্যায় চামড়া খাত বিপাকে আছে। রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সামনে কোরবানির ঈদ। এর আগে চামড়া খাত ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না।

শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের আগে উদ্যোক্তাদের বলা হয়েছিল কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে। এখন কর অবকাশ সুবিধা তো দূরের কথা, স্থান ও স্থাপনা নির্মাণের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

শাহীন আহমেদ জানান, একটি কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ৩১ ধরনের কেমিক্যাল লাগে। ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে এসব কেমিক্যাল বন্ডের আওতায় পরে মাত্র ৩০টি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলোকে শুল্ক কর দিয়ে আনতে হয়। শুধু এ কারণে অনেক ট্যানারি বন্ধের পথে। এ সমস্যা সমাধানে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীকে বন্ডেড ওয়্যারহাউস ঘোষণা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, চামড়া খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক আমদানি শুল্ক হার ৫ শতাংশের বেশি হলে কর অব্যাহতি প্রদান করার বিধান রয়েছে। এটাকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা দরকার।

সভাপতি বলেন, দেশে খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানিতে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো সব সুবিধা চামড়া খাতকে দেওয়া উচিত। বিশেষভাবে কারখানা নির্মাণে সব ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের প্রয়োজন। তৈরি পোশাক শিল্পের মতো রাজস্ব সুবিধা নিশ্চিত করা হলে রপ্তানি আয়ে চামড়া খাত শীর্ষে পৌঁছে যাবে।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্যানারিশিল্প সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে। এই শিল্পকে বন্ড ওয়্যারহাউস সুবিধাসহ যা যা দরকার, এনবিআর নিজেরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

ফিড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মসিউর রহমান পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামালের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি মওকুফের দাবি জানিয়ে বলেন, ঘরে ঘরে গড়ে ওঠা এ শিল্প আজ মারাত্মক হুমকির মুখে আছে। ব্যবহৃত খাদ্য,ওষুধ, যন্ত্রপাতিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হলে এ শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আসছে বাজেটে পোল্ট্রি খাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ আমদানিতে বিশেষ ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে।

অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আলীমুল এহছান চৌধুরী বলেন, অ্যাগ্রিকালচাল মেশিনারি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে গণ্য না হওয়ায় ব্যাংকঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এই শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে গণ্য করার দাবি জানান।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী কৃষিশিল্পের ক্ষেত্রে করপোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ করার দাবি জানান। এ ছাড়া তিনি বার্ষিক টার্নওভারের ওপর আয়কর সম্পূর্ণ অব্যাহতির দাবি জানান।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন থেকে তরমুজ ও বাঙ্গির বীজের আমদানির ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কৃষিজাত পণ্যের বীজ আমদানির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির পক্ষ থেকে তৈরি বিস্কুট, পাউরুটি, বনরুটিসহ সব ধরনের বিস্কুটকে কর অব্যাহতি দেওয়ার দাবি করা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এই খাতে ভ্যাট কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here