রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের বছরপূর্তি হয়েছে গত সপ্তাহে। এখনও শিল্পনগরীর প্লটের মালিকানা দলিল বুঝে পাননি ট্যানারি মালিকরা। জমির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মন্ত্রণালয় ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে দর কষাকষি চলছে। এখনও কোনো সমাধান হয়নি। এ কারণে মালিকরা জমির নিবন্ধন করতে পারেননি। এতে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ সংকটে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। দলিল না থাকায় ব্যাংক ঋণও পাচ্ছেন না তারা।
বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরে সরকারের উদ্যোগ অনেক পুরনো। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ১৪ বছরের দীর্ঘ চেষ্টার পর গত বছরের ৮ এপ্রিল সাভারে কারখানা স্থানান্তর করেন উদ্যোক্তারা। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ১৫৫ ট্যানারির মধ্যে ১০২টি ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। বাকিগুলোতে চালুর জন্য কাজ চলছে। শুধু প্লটের বরাদ্দপত্র দিয়েই কারখানা স্থাপন করেছেন মালিকরা।
সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় ২০০ একর জমির ওপর চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্প গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ২০০৩ সালে। প্রথমে ১৭৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প শুরু হয়। তখন প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য ধরা হয় ১৯৭ টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় বাড়লে প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ হয় ৩২৮ টাকা। তৃতীয় দফায় এ প্রকল্পের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) স্থাপনের ব্যয় যুক্ত করা হয়। এরপর প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ৭৬৮ টাকা। শুরু থেকে ট্যানারি মালিকরা এ দরে জমি কিনতে আপত্তি জানিয়ে আসছেন। ট্যানারি মালিকরা জানান, বর্তমান প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা ট্যানারি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। বাকি ৮২৯ কোটি টাকার মধ্যে ৬৩৮ কোটি টাকা সিইটিপি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে। ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ভূমি, সড়ক, সীমানা প্রাচীর, ড্রেনেজ লাইন, অগ্নিনির্বাপণ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ সব উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। তাদের দাবি, দূষণ রোধে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে নেওয়ার আগে সরকার সিইটিপি করে দেওয়ার কথা ঘোষণা দেয়। এ ব্যয় সরকার বহন করবে। প্রকল্প ব্যয়ে এটি যোগ করে জমির মূল্য নির্ধারণ করা অযৌক্তিক বলে তাদের দাবি।
প্লটের নিবন্ধন পেতে চমড়া খাতের ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ) সম্প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিকে আবেদন করেছে। আবেদনে বলা হয়, শিল্পনগরীতে বরাদ্দ পাওয়া প্লটে অনেক টাকা ব্যয় করে কারখানা স্থাপন করেছেন শিল্প-উদ্যোক্তারা। এখনও প্লটের মালিকানা দলিল না হওয়ায় জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নিতে পারছেন না। প্লট বরাদ্দের সময় কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য নির্ধারিত মূল্য উদ্যোক্তারা সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে পরিশোধ করেছেন। পরে সিইটিপি ও অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণ ব্যয় প্লটের মূল্যে একীভূত করেছে বিসিক। কিন্তু চামড়া খাতের উদ্যোক্তারা এই মূল্য মানতে রাজি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত মূল্য চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। আবার আগে নির্ধারিত মূল্যের বকেয়া কিস্তি এখন গ্রহণ করা হচ্ছে না। এই জটিলতা নিরসনের জন্য সিইটিপি নির্মাণ ব্যয় ও জমির মূল্য আলাদা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি।
চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক সমকালকে বলেন, সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপি অনুয়ায়ী প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য ১ হাজার ৭৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ মূল্য নিয়ে মালিকরা আপত্তি জানিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনা হলেও এখনও কোনো সমাধান হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিএফএলএলএফইএর সভাপতি মহিউদ্দিন মাহিন সমকালকে বলেন, জমির দলিল না পাওয়ায় ঋণ নিতে পারছেন না তারা। ট্যানারি মালিকদের হাতের অর্থ বিনিয়োগ করে এখন সংকটে আছেন তারা। অনেক মালিক বিনিয়োগ করেও ট্যানারি চালু করতে পারেননি। চালু হওয়া ট্যানারির বেশির ভাগই পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনি। এ অবস্থায় সিইটিপির ব্যয় বাদ দিয়ে যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে জমির দলিল নিবন্ধনের দাবি জানান তিনি।