বর্তমান মেয়াদের পর ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের কার্যক্রম ছয় মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত্ম নিয়েছে সরকার। তবে এই সময়ের মধ্যে জাতীয় উদ্যোগে গঠিত সংস্কারকাজ সমন্বয় সেল (আরসিসি) সক্ষমতা অর্জন না করলে ছয় মাস করে এই জোটের মেয়াদ বাড়বে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ডের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানানো হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির দুই সদস্য ইন্ডাস্ট্রিঅল গেস্নাবাল ইউনিয়নের সহকারী মহাসচিব জেনি হোল্ডক্রফট ও এলসি ওয়াইকিকির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা এডওয়ার্ড সাউথহল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি ফারম্নক হাসান ও মাহমুদ হাসান খান, অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এইচঅ্যান্ডএমের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা কার্ল গার্নার ফার্গলিন, শ্রমিকনেতা রায় রমেশ চন্দ্র, আমিরম্নল হক আমিন প্রমুখ।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা পস্নাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। পাঁচ বছরের জন্য গঠিত এই কার্যক্রমের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে অ্যাকর্ডের সদস্য ১ হাজার ৬২০ পোশাক কারখানার ত্রম্নটি সংস্কারকাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে অ্যালায়েন্সের ৬৬৪ কারখানার ত্রম্নটি সংস্কারকাজ প্রায় ৮৯ শতাংশ শেষ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অ্যাকর্ডের পাঁচ বছরের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হয়ে যাবে। তাদের কাজ বুঝে নেয়ার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের প্রস্ত্মুতি শেষ পর্যায়ে। তাই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আরও ছয় মাসের জন্য অ্যাকর্ডের মেয়াদ বর্ধিত করেছেন। এই ছয় মাস কার্যক্রম চালানোর জন্য সরকার সম্প্রতি অন্ত্মর্র্বর্তীকালীন তদারকি কমিটি (টিএমসি) গঠন করেছে। এতে সরকার, ব্র্যান্ড, শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর প্রতিনিধি রয়েছে।
অ্যাকর্ডের পক্ষে লিখিত বিবৃতিতে এলসি ওয়াইকিকির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা এডওয়ার্ড সাউথহল বলেন, চলতি সপ্তাহে অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার সম্মতি দিয়েছে। এ ছাড়া কারখানা পরিদর্শন ও সংস্কারকাজ চালানোতে সক্ষম একটি জাতীয় সংস্থার কাছে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম তুলে দিতে টিএমসি নামে যৌথ কমিটি গঠন করেছে। ৬ মে কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে জাতীয় সংস্থার কী কী যোগ্যতা অর্জন করা হবে, সে বিষয়গুলো চূড়ান্ত্ম হয়েছে।
এডওয়ার্ড সাউথহল বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত্ম অনুযায়ী অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বুঝে নিতে জাতীয় সংস্থাকে কারখানার পরিদর্শন করার সক্ষমতা, নিরাপত্তাঝুঁকি সংশোধন, নন-কমপস্নায়েন্ট কারখানার বিরম্নদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া, ত্রম্নটি সংশোধন কাজ ও পরিচালনা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং শ্রমিকের নিরাপত্তাবিষয়ক অভিযোগ সম্পর্কে সঠিক তদন্ত্ম করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম বুঝে নিতে ইতোমধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) আন্ত্মর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আরসিসি) সহযোগিতায় আরসিসি গঠন করেছে। তবে প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রকৌশলী নিয়োগ না হওয়ায় আরসিসির কার্যক্রম চলছে খুঁড়িয়ে। আইএলও ৪৭ জন প্রকৌশলী দেয়ার কথা থাকলেও এখনো নিয়োগ দেয়নি। জুনের আগে সেটি হবে বলে আশা করছেন ডিআইএফইর কর্মকর্তারা।
পরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এডওয়ার্ড সাউথহল বলেন, আরসিসি অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বুঝে নিতে এখনো প্রস্ত্মুত নয়। আরসিসি সবদিক থেকে যোগ্য হয়ে ওঠার পরই অ্যাকর্ড তার কার্যক্রম গোটাবে। সে ক্ষেত্রে ছয় মাস করে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
গত মাসে অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, সরকার অ্যাকর্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির করেছে। ফলে আদালতের বিষয়টিও সরকার দেখবে বলে মন্ত্মব্য করেন তিনি।
