আশুলিয়ার ইউনাইটেড ট্রাউজার। কারখানাটির শ্রমিক সংখ্যা আড়াই হাজার। আসন্ন ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হতে পারে পোশাক খাতের এ কারখানায়। বাড্ডার সাঁতারকূলে অবস্থিত চুনজি নিট কারখানাটি নিয়েও একই আশঙ্কা করছে পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে, এমন কারখানার মধ্যে আরো আছে রামপুরায় অবস্থিত আশিয়ানা গার্মেন্টস লি., গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে নাইন অ্যাঙ্গেল গার্মেন্টস লি.; মিরপুরের রায়না গার্মেন্টস, আনিকা গার্মেন্টস ও আশুলিয়ার জামগড়ার বাঁধন করপোরেশন লিমিটেড।
ঈদের আগে বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষের ঝুঁকিতে থাকা কিছু পোশাক কারখানার নাম বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পেয়েছে বিজিএমইএ। এছাড়া সংগঠনটির সমন্বয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। ১৫টি পর্যবেক্ষণ টিমের মাধ্যমে কারখানাগুলোয় সমস্যার ধরন বুঝে সমাধানের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা এলাকার ১৬৮টি কারখানায় মার্চে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এপ্রিলে এমন অসন্তোষ ছিল ১৫৮টি কারখানায়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ঈদের আগে চলতি মাসেও কিছু কারখানায় অসন্তোষের ঝুঁকি দেখছে সংস্থাগুলো।
এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গতকাল মাসের প্রথম সাত কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ববর্তী মাসের বেতন পরিশোধ এবং ঈদে কারখানা বন্ধের আগে বোনাস পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঈদ উপলক্ষে পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষের চিহ্নিত কারণগুলোর মধ্যে আছে সাত-আটদিন আগে বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পরিশোধ না করা। পোশাক কারখানায় ঈদ বোনাসের পরিমাণ নির্দিষ্ট না থাকায় কারখানাভেদে এ বোনাসের পরিমাণ ভিন্ন হয়। এ কারণে কখনো কখনো নির্দিষ্ট সময়ে বোনাস দেয়া হলেও প্রাপ্ত বোনাসের পরিমাণ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মতে, শ্রমিক অসন্তোষের কারণের মধ্যে আরো আছে ঈদ উপলক্ষে যথাযথ সময়ে ও চাহিদা মোতাবেক ছুটি না পাওয়া, বেতন-ভাতা না দিয়ে হঠাৎ ঈদের আগে কারখানা বন্ধ অথবা লে-অফ ঘোষণা করা, শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতন ও হয়রানি এবং রমজানে শ্রমিকদের সামর্থ্যের বেশি কাজ দেয়া।
গতকাল মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ত্রিপক্ষীয় ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভা শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, মালিকপক্ষকে অনুরোধ করেছি মে মাসের বেতন শ্রম আইন অনুযায়ী পরবর্তী মাসের সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার। এটা তারা এমনিতেও দেন। তার পরও বিষয়টি নিশ্চিত করতে জোর দিয়েছি। এছাড়া ঈদের উৎসব ভাতা ঈদের আগেই সময়মতো দেয়ার বিষয়ে বলেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে অঞ্চলভিত্তিক শিল্প-কারখানাগুলো ছুটি দেয়ার বিষয়ে বলেছি এবং ছুটি দেয়ার আগেই উৎসব ভাতা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। মালিকরা সক্ষমতা অনুযায়ী সমঝোতার ভিত্তিতে জুনের বেতন দিতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ১৪ জুনের আগে অবশ্যই সব পরিশোধ করতে হবে। আমাদের সংস্থাকে আমি নির্দেশ দিচ্ছি শ্রমপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তত্পর থাকার বিষয়ে। সমস্যা হলেও তা হবে খুবই সামান্য। আমাদের সব গোয়েন্দা বাহিনী কিছু তালিকা দিয়েছে। তারাও তত্পর ও সতর্ক আছে।
কমিটির সদস্য ও জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক লীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বণিক বার্তাকে বলেন, আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন যেন সম্ভব হয়, সেজন্যই আমরা বলেছিলাম ১০ তারিখের মধ্যে উৎসব ভাতা পরিশোধ শেষ করতে। কারণ ঠিক বন্ধের আগে উৎসব ভাতা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়।
বিজিএমইএর তথ্যমতে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঈদের আগে পরিশোধের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ব্যাংকগুলো আগের মতো সহযোগিতা করছে না জানিয়ে সংগঠনের একটি সূত্র বলেছে, বছর শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গঠন হয়েছে নতুন বোর্ড। এ অবস্থায় কিছু শ্রমিক সংগঠন জাতীয় নির্বাচন ও ন্যূনতম মজুরি নিয়ে মাঠ গরম করার পাঁয়তারা করছে। এসব কারণ আমলে নিয়েই ১ হাজার ২০০ কারখানাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় রেখেছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বিজিএমইএর ১৫টি টিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু কারখানায় সমস্যা আছে, ব্যাংকগুলো আগের মতো সহযোগিতা করছে না। তার পরও আমরা বলতে পারি, প্রতিবারের মতো সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে শ্রমিক-মালিক সবাই মিলে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব।