Home Bangla Recent পোশাক রপ্তানির দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাবনা দেখছে বিজিএমইএ

পোশাক রপ্তানির দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাবনা দেখছে বিজিএমইএ

মস্কোতে শেষ হলো তিন দিনের মেলা

মস্কোতে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পেলেও এটিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সরকার, উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন মস্কো। তাঁরা জানান, রাশিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারে দেশের পণ্য রপ্তানিতে স্থানীয় দূতাবাসকে অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর আরো জোর দিতে হবে।

রাশিয়ার মস্কোতে র‌্যাডিসন স্লাভিয়ানস্কায়া হোটেলে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের তৈরি পোশাক ও পাটজাত পণ্যের মেলায় অংশগ্রহণকারীরা এসব কথা জানান। সম্ভাবনা আর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার শেষ হলো তিন দিনের এ প্রদর্শনী।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ দূতাবাস এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে। মেলায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি), জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেপিডিসি) তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, টেরিটাওয়াল উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিটিটিএলএমইর সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক চমত্কার। পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সহযোগিতার পাশাপাশি সামরিক দিক থেকেও দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বাড়ছে। আমরা আশা করি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও বাড়বে। আর এ জন্য সরকার-ব্যবসায়ী যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।

প্রদর্শনী নিয়ে মোটেও হতাশ নই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এখানে এসে সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করেছি। এর ফলে সামনে এগিয়ে যেতে আমাদের জন্য সহায়ক হবে। আমরা শুধু রাশিয়ায় নয়, সিআইএস দেশগুলোতেও আমাদের বাজার বাড়াতে কাজ করতে চাই।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, প্রদর্শনীতে স্থানীয় ক্রেতাদের যে ধরনের উপস্থিতি আশা করেছিলাম এর কিছুই হয়নি। আমি মনে করি রাষ্ট্রদূত এবং কমার্শিয়াল কাউন্সিলদের আরো বেশি উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন ছিল। রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা আছে। তাই কাউকে খুশি নয়, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় দেশ। এ দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। তবে এবারের পদক্ষেপ বেশ ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়েই আমাদের সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। তিনি আরো বলেন, সরকার ব্যবসায় সহায়তা করে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে। এসব বিষয়ে সরকার দেশে-বিদেশে আমাদের সহায়তা করছে। তবে রাশিয়ায় একটু ব্যতিক্রম। মেলায় কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা আসেনি। আশা করি এই উদ্যোগের ফলে সামনে ইতিবচাক সাড়া পাওয়া যাবে।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বাংলাদেশর পণ্যের প্রসারে এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। রপ্তানি বাড়াতে নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সম্ভাবনাময় জায়গাগুলোকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য বিজিএমইএ ও সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে গণমাধ্যমও কাজ করছে। তবে বিদেশে বাংলাদেশের স্থানীয় দূতাবাসের মূল কূটনৈতিক উদ্যোগ হওয়া উচিত অর্থনৈতিক কূটনীতি। সেসব দায়িত্বগুলো তাঁরা পালন করেন না।

বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি মো. মঈন উদ্দিন আহমেদ জানান, রাশিয়ায় যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে আমরা এসেছিলাম সে প্রত্যাশা পূরণ না হলেও এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আগামীতে রাশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্যের একটি বড় জায়গা তৈরি হবে। এর ফলে দেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের রূপকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

রাশিয়ায় বাজার সম্প্রসারণে বাধা নিয়ে বিজিএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বর্তমানে প্রধান কাজ হলো বাজার এবং পণ্য বহুমুখী করা। আর এ লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এখানে আসা। তবে রাশিয়ায় কমার্শিয়াল উইং প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছে না। তিনি স্থানীয় দূতাবাসকে অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং কর্মসংস্থানে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্থানীয় দূতাবাসকে এসব বিষয়ে আরো জোড়ালো ভূমিকা রাখতে হবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র দেড় শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত রাশিয়ায় ৩৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে দেশটিতে তৈরি পোশাক খাতের বাজার পাঁচ হাজার ২০০ কোটি ডলারের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here