চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সার্বিক রফতানি আয় সাড়ে ছয় শতাংশ বাড়লেও তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই খাতে আয় বেড়েছে তিন দশমিক ১৭ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রফতানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ (৩০ দশমিক ৪০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।
এই অংক গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ছয় দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ কম। এই দশ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল তিন হাজার ৪৯ কোটি ৭০ লাখ (৩০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে দুই হাজার ৮৫৭ কোটি ৫২ লাখ (২৮ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৯ শতাংশ, অগাস্টে রফতানি আয় বাড়ে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। এই দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ১৪ শতাংশ; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বাড়ে আট শতাংশের বেশি। সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশে নেমে আসে, লক্ষ্যমাত্রাও হোঁচট খায়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে দুই হাজার ৫৩০ কোটি ৫৫ লাখ (২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে নয় দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে এক হাজার ২৫৪ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং উভেন পোশাক রফতানিতে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট রফতানি আয়ের মধ্যে ৮৩ দশমিক ২২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে তিন দশমিক ১৭ শতাংশ।
এই দশ মাসে নিট খাতে রফতানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর উভেনে বেড়েছে ছয় দশমিক ৪২ শতাংশ। অর্থবছর শেষে পোশাক রফতানি ৩০ বিলিয়ন (তিন হাজার কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন রফতানিকারকরা।
তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসায় বাংলাদেশের রফতানি আয়ে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী দিনগুলোতে রফতানি আয় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের রফতানি বাণিজ্যের মূল গন্তব্য তথা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ায় রফতানি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। এছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের দরবৃদ্ধি রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অবদান রাখছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে পাঁচ শতাংশের বেশি। ছয় মাসে বেড়েছে তিন শতাংশ।
আগামী জুন পর্যন্ত (চলতি অর্থবছর) রফতানি আয় বৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, কারখানাগুলোর উন্নয়নে মালিকরা অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কষ্টও করেছেন। ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) আওতায় চলে এসেছে। এতে বায়াররাও খুশি।
অন্যান্য খাতে রফতানি: জুলাই-এপ্রিল সময়ে হিমায়িত খাদ্য রফতানি আয় বেড়েছে দুই দশমিক ৩২ শতাংশ। কৃষি পণ্য রফতানি ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি সাত দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধ রফতানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তামাক রফতানি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে চা রফতানি কমেছে ৩৯ শতাংশের বেশি। প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি ১০ শতাংশ কমেছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানি আয়ে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি (৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য রফতানি থেকে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ (৩৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে তিন দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি।