গার্মেন্টস পণ্য তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বায়াররা (বিদেশি ক্রেতা)। এসব কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা বিষয়ে সরকার ও পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র উদ্যোগ কী, তা জানতে চেয়েছে। তারা মনে করছে, এসব কারখানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের পাশাপাশি ক্রেতাদেরও চাপের মুখে পড়তে হয়। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিজিএমইএ’র সঙ্গে এক বৈঠকে বিদেশি ক্রেতাদের সংগঠন বায়ার্স ফোরামের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র পরিচালক রেজোয়ান সেলিম। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ক্রেতারা সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বলেছে, অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে প্রায় দুই হাজার কারখানার নিরাপত্তা মান উন্নয়নে কাজ হয়েছে। কিন্তু বিদেশি ক্রেতাদের পোশাক তৈরি হওয়া অনেক সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য নেই। নিরাপত্তা তদারকির বাইরে থাকা এসব কারখানাকে চিহ্নিত করতে বিজিএমইএ’র উদ্যোগ কী তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ গার্মেন্টস অধ্যুষিত এলাকায় অপেক্ষাকৃত ছোট পরিসরে অনেক সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় অনেক বিদেশি নামি-দামি ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি হয়। কিন্তু এসব কারখানায় দুর্ঘটনা হলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকেও আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখে পড়তে হয়। সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে বায়ার্স ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তদারকিতে থাকা কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ নেই। কিন্তু এর বাইরে থাকা কারখানার মধ্যে সাব-কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে কাজ করা কারখানার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কাছে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
২০১২ ও ২০১৩ সালে তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় শত শত শ্রমিকের মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে ওইসব ভবনের কারখানায় তৈরি পোশাকের বায়াররাও। এতে তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চাপের মুখে বাংলাদেশে কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষার লক্ষ্যে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠন করতে হয়। এজন্য বেশ বড় অঙ্কের অর্থও খরচ করতে হচ্ছে তাদের।
সূত্র জানিয়েছে, দেশে সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার প্রকৃত তথ্য কারো কাছেই নেই। তবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, দেশে বর্তমানে গার্মেন্টস কারখানার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। এর মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র ইউডি (বায়ারের সরাসরি রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর ইউটিলিটি ডিক্লারেশন) নেয় প্রায় আড়াই হাজার। মোটাদাগে হিসাব করলে বাদবাকি দুই হাজার কারখানা সাব-কন্ট্রাক্ট। তবে তিনি বলেন, অনেক সময় সরাসরি ক্রয়াদেশ পাওয়ার তালিকায় থাকা কারখানাও সাব-কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে কাজ করতে পারে। আবার আজ যে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে, কাল ওই কারখানা সরাসরিও অর্ডার নিয়ে কাজ করতে পারে। এ জন্য সাব কন্ট্রাক্ট কারখানা না খুঁজে, কোন কারখানাগুলো তদারকির বাইরে আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার আলোচনা জোরদার করা দরকার।
অবশ্য ডিআইএফই অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তদারকির আওতার বাইরে থাকা দেড় হাজার কারখানাকে চিহ্নিত করে সেগুলোর সংস্কার কাজ দেখভাল করছে। এর বাইরে আরো ৯শ’ কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারখানাগুলো কারো নজরদারির মধ্যেই নেই। অবকাঠামো দুর্বলতা ছাড়াও বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ হয় মূলত এ কারখানাগুলোতে। আগামী ঈদেও এসব কারখানার সম্ভাব্য শ্রম অসন্তোষ নিয়েই চিন্তা সরকারের।