Home Bangla Recent আলোচনার কেন্দ্রে শ্রম অধিকার ও অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স ইস্যু

আলোচনার কেন্দ্রে শ্রম অধিকার ও অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স ইস্যু

বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতকে আরো টেকসই ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং আইএলও’র সমন্বয়ে গঠিত সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের চতূর্থ সভা গতকাল বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সভায় গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেওয়া উদ্যোগ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বিশেষত শ্রম আইনের সংশোধনের প্রস্তাব কবে নাগাদ আইনে পরিণত হবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এছাড়া ইউরোপ ও আমেকাির ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষত অ্যাকর্ডের কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংস্কার দেখভালের লক্ষ্যে সরকার গঠিত সংস্কার সমন্বয় সেল বা আরসিসি প্রস্তুত কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ সময় জানানো হয়, অন্যথায় বাংলাদেশে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে যৌক্তিকতা তৈরি হবে।

অবশ্য সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে অ্যাকর্ডের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ সরকারের হাতে নেই। আর শ্রম আইনের সংশোধন প্রস্তাব আগামী সেপ্টেম্বরের সংসদ অধিবেশনে পাশ করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। তবে গত কয়েক বছরে শ্রম অধিকার রক্ষায় সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। গতরাত সাড়ে নয়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও সভা চলছিল।

বানিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত ছিল। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, এফবিসিসিআই সভাপতি, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুটি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র প্রতিনিধি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। ব্রাসেলসে থেকে মোবাইল ফোনে ইত্তেফাককে তিনি বলেন, সভায় আমাদের পক্ষ থেকে শ্রম অধিকার রক্ষায় নেওয়া উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি শ্রম আইনের সংশোধনের প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়েছে। তবে ইউরোপ ও আমেরিকা মূলত শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা ও অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম শেষে আরসিসি’র সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। অন্যথায় অ্যাকর্ড থাকতে হতে পারে বলে বলা হচ্ছে। যদিও আমাদের মন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরসিসিকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকার শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াকে সহজ করতে সরকার ইতিমধ্যে শ্রম আইনে বেশকিছু সংশোধনের প্রস্তাব এনেছে। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার কনফারেন্সেও (আইএলসি) ওই সংশোধনীর প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে আইএলসিতে বাংলাদেশ বিষয়ে স্পেশাল প্যারাগ্রাফের নামে অতীতের বছরগুলোর মত শ্রম অধিকার সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে।

অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে কোন কারখানার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের লিখিত স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। এটি আরো সহজ করার জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়াও সহজ করা হচ্ছে। এ ইস্যুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এ প্রক্রিয়া সহজ করার তাগিদ দিয়ে আসছিল। এছাড়া শ্রম সংক্রান্ত বিরোধ ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়নের আদলে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার দেওয়া, সেখানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কারখানা পরিদর্শনের বিষয়গুলোও শ্রম আইনে অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টের সভায় এসব অগ্রগতি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টসকে টেকসই করার লক্ষ্যে গঠিত হয় সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা,আইএলও ছাড়াও বাংলাদেশও এতে যুক্ত রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here