সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের তৈরি পোশাক খাত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিল। এ সময় অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করা ছাড়াও নানান কারণে দেশটি বাংলাদেশের পোশাক খাতের বেশ মন্দা সময় অতিক্রম করছিল। তবে কয়েক মাস ধরে দেশটির বাজারে বাংলাদেশের পোশাক আবারো ইতিবাচক দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বস্ত্র ও পোশাক খাতের দপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের (জানুয়ারি-এপ্রিল) প্রথম চার মাসে আয় হয়েছে ১৮৭ কোটি ডলার। এ আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুসারে তার সরকার ট্রান্স ফ্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি বাতিল করায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে এ সুবাতাস তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পোশাক খাতে বিশ^বাজারে বাংলাদেশ অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। টিপিপি সুবিধার ফলে দেশটি প্রায় শূন্য শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি করতে পারত। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাও দেশটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগও করে ভিয়েতনামে। তবে গত বছর জানুয়ারিতে এ চুক্তি বাতিলের পর সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাক খাতের বড় বড় ক্রেতা আবারো বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করছে।
এ ব্যাপারে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টিপিপির চুক্তি ও রানা প্লাজা ধসের দুর্ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানি কিছুটা কমে এসেছিল। তবে কয়েক মাস ধরে এ বাজারে আবারো ইতিবাচক ধারা ফিরতে শুরু করেছে। আর এর মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র টিপিপি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা।
ফলে আমাদের পোশাক রপ্তানির বিশ^ বাজারে বড় প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসা আবারো বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের বস্ত্র ও পোশাক দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ষষ্ঠ রপ্তানিকারক দেশ। প্রায় ৯০ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক খাতে একক বড় রপ্তানি বাজারে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এ সময় সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করেছে চীন, যা প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এ সময় ভারত রপ্তানি করেছে ২৬৭ কোটি ডলার, ভিয়েতনাম প্রায় ৪০০ এবং পাকিস্তান এই বাজারে তাদের পোশাক রপ্তানি করেছে ৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামের সঙ্গে টিপিপি চুক্তিটি হয়। টিপিপি চুক্তির আওতায় যেসব দেশ সুবিধা বিশেষ বাজার সুবিধা পেত সেই দেশগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশগুলো বিশ^ অর্থনীতির প্রায় ৪০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
