শ্রমিকদের কল্যাণে তহবিল গঠনের জন্য তৈরি পোশাক রফতানিতে শতকরা তিন পয়সা হারে কর্তনের বিধান রয়েছে। সংশোধিত শ্রম আইনের বিধিমালা অনুযায়ী গত অর্থবছর থেকে এটি কার্যকর হয়। এ অর্থেই কেন্দ্রীয় তহবিল গঠিত হয়। সরকারের পক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয়, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি তহবিলটি পরিচালনা করছে। তবে রফতানি আয় অনুপাতে তহবিলে অর্থ জমা হচ্ছে না। অন্তত ৩১ শতাংশ অর্থ কম জমা পড়ছে। কী কারণে হিসাব অনুযায়ী অর্থ জমা পড়ছে না, তা খতিয়ে দেখছে সরকার। একই সঙ্গে তহবিলে অর্থের জোগান বাড়াতে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলোকেও এ তহবিলের আওতায় আনা হয়েছে। গত মাসে অন্য কারখানার মতো ইপিজেডের কারখানা থেকে পোশাক রফতানিতে অর্থ কর্তন শুরু হয়েছে।
গত অর্থবছরে পোশাক রফতানি হয়েছে দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার বা দুই লাখ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের পোশাকের রফতানি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে গত ১১ মাসের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ। গত অর্থবছরের রফতানি করা মোট অর্থের শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের ১১ মাসে ২৮ কোটি ডলারের বেশি পোশাক রফতানি করা হয়েছে। এতে করে গত দুই বছরে জমার পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার কথা। অথচ গতকাল পর্যন্ত তহবিলে জমার পরিমাণ মাত্র ৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকৃত পরিমাণ থেকে অন্তত ৪৪ কোটি টাকা কম। কোনো কোনো পর্যায়ে এ অর্থ ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় তহবিলের মহাপরিচালক ড. এ এম এম আনিসুল আউয়াল। সমকালকে তিনি বলেন, তহবিলে কাঙ্ক্ষিত হারে অর্থ জমা পড়ছে না। অন্তত ২৫ শতাংশ অর্থ কম জমা পড়ছে। কী কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে অর্থ জমা পড়ছে না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তারা নিয়মিত হারে অর্থ জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন। তারপরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। আশানুরূপ অর্থ জমা না পড়ায় এ কারণে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলোকেও এ তহবিলের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। গত মাস থেকে অন্য কারখানার মতো ইপিজেডের কারখানার পোশাক রফতানি চালান থেকে অর্থ কেটে রাখা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৈরি পোশাকের সব ধরনের রফতানির বিপরীতে শতকরা তিন পয়সা হারে কর্তনের নিয়ম মানছে না অনেক ব্যাংক। অসাধু রফতানিকারকদের যোগসাজশেই এ অবস্থা চলছে। বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে জমাকৃত অর্থের প্রতিবেদন প্রমাণসহ পরবর্তী মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় তহবিলের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে এ নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, তৈরি পোশাক শিল্পের সব প্রতিষ্ঠানের এলসি, বায়িং কন্ট্রাক্ট, চুক্তি, পারচেজ অর্ডার বা অগ্রিম পরিশোধ ইত্যাদি উপায়ে প্রত্যাবাসিত রফতানি মূল্যের বিপরীতে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক থেকে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হারে অর্থ কর্তন করার নিয়ম রয়েছে। কর্তন করা অর্থ যথানিয়মে সোনালী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় তহবিলের ‘সিআরএমজি সেক্টর’ হিসাবে জমা করতে হবে।
পোশাক শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, স্থায়ী অক্ষমতা বা অঙ্গহানি, চাকরিরত অবস্থায় অসুস্থতা, শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদানসহ আপদকালীন প্রয়োজনে এ অর্থ কাজে ব্যয় করা হয়। গত দুই বছর তহবিলে ৯৬ কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে শ্রমিকদের মৃত্যুবীমা বাবদ। শ্রমিকদের সন্তানদের চিকিৎসা ও শিক্ষা বাবদ আরও কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রফতানি মূল্যের ওপর শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হারে কর্তিত অর্থেই এ তহবিল গঠিত হয়। সরকারের পক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয়, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি তহবিলটি পরিচালনা করছে। কেন্দ্রীয় তহবিল গঠনের পর সরকারে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে কোম্পানির মুনাফার ১০ শতাংশ জমা দেওয়ার যে আইন রয়েছে, তা থেকে পোশাক খাতকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।