তৈরি পোশাক শিল্পে করপোরেট কর হার বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই শিল্পের জন্য প্রস্তাবিত বাড়তি করপোরেট কর কমানো এবং আগামী তিন বছরের জন্য উৎসে কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি করেছে এ খাতের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ দাবি জানায়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ কারখানার ক্ষেত্রে করপোরেট করের বিদ্যমান হার ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ এবং গ্রিন ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করপোরেট করহার নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া প্রাক-বাজেট বিভিন্ন আলোচনায় পোশাক খাতের উৎসে কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি করা হলেও বাজেটে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাজেটের আগে বিজিএমইএ’র দাবি ছিল বিদ্যমান করপোরেট করহার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের। অথচ বাজেট প্রস্তাবনায় করপোরেট করহার ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ এবং সবুজ শিল্পের জন্য ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করহার বাড়ানোর ফলে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তাই পোশাক শিল্পে করপোরেট করহার ১০ শতাংশ নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
উৎসে করের বিষয়ে তিনি বলেন, পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে আগামী তিন বছরের জন্য উৎসে কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রত্যক্ষ রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে উৎসে কর কাটা হচ্ছে। সেইসঙ্গে একই রপ্তানির এলসির বিপরীতে প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক যেমন সুতা, কাপড় ও এক্সেসরিজ সরবরাহকারীদের থেকেও একই হারে উৎসে কর কর্তন করা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
ভ্যাটের বিষয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রপ্তানিসংশ্লিষ্ট স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফসহ রিটার্ন দাখিল করা থেকে অব্যাহতি প্রদান, বিগত ৫ থেকে ৬ বছরের যে ভ্যাট দাবি করা হচ্ছে তা মওকুফ; গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ওপর প্রদত্ত মূসক প্রত্যার্পণের ক্ষেত্রে জটিলতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১০০ ভাগ মূসক অব্যাহতি দেওয়ার কথা পোশাক মালিকদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বাজেটে সে বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
তিনি বলেন, শুধু পোশাক শিল্পের ওপর ভিত্তি করেই বাজেট হবে না। নতুন বাজেটে পোশাক শিল্পের জন্য সুখবরও নেই, খারাপ খবরও নেই। পোশাক শিল্পের জন্য সব থেকে সমস্যার বিষয় হলো ভ্যাট। ভ্যাট থাকলেই হয়রানি হবে। তাই রপ্তানি খাতকে সম্পূর্ণভাবে ভ্যাটমুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।
স্ট্যাম্প শুল্কের বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, কর্মসংস্থান, রপ্তানি ও জাতীয় স্বার্থে পোশাক শিল্পের সক্ষমতা ধরে রাখা ও এর সুরক্ষার জন্য রপ্তানি বিলের ওপর শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে স্ট্যাম্প শুল্ক কর্তন করা থেকে তৈরি পোশাক শিল্পকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ বিষয়েও বাজেটে কিছু বলা হয়নি। অথচ ডেফার্ড পেমেন্টে রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা ৩ থেকে ৪ মাস পর পেমেন্ট পেয়ে থাকেন। তার ওপর আরও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হারে স্ট্যাম্প শুল্ক কর্তন করা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো।
তবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সামগ্রিকভাবে এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব। এ বাজেটে কর্মসংস্থান হবে ও বিনিয়োগ বাড়বে। তবে পোশাক শিল্পে করপোরেট কর বাড়ানোর যে প্রস্তাব করেছেন তা কাম্য নয়।