Home Bangla Recent পোশাক রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম

পোশাক রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম

দেশের রপ্তানিতে ২০১৭ সালে তৈরি পোশাকের অবদান ২৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। এই রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অবদান ৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, যা মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির মাত্র ১৩.৩৮ শতাংশ। অথচ নূরুল কাদের খান ‘দেশ গার্মেন্টস’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের যাত্রা ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকেই শুরু করেছিলেন। ১৯৮৪ সালে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি শ্রমিক-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা সংবলিত নতুন ধারণা নিয়ে এই চট্টগ্রামেরই বন্দরটিলা এলাকায় বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অধীনে প্রথম স্থাপিত হয় চট্টগ্রাম ইপিজেড। সেই থেকে গার্মেন্টশিল্প তথা পোশাক রপ্তানি খাতে দীর্ঘদিন যাবৎ চট্টগ্রাম ছিল পথিকৃৎ। ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশের অংশীদার ছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু সে আধিপত্যে এখন ধস নেমেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই পোশাক শিল্পকেন্দ্রিক। একসময় নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম কিন্তু সে গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। সমুদ্রবন্দর ও ইপিজেড সুবিধা থাকার পরও জাতীয় রপ্তানিতে ক্রমেই পিছিয়েছে চট্টগ্রাম। অথচ এই সময়ে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার উপকূলে গার্মেন্টশিল্প যেভাবে বিকশিত হয়েছে ঠিক ততটাই অবহেলায় চট্টগ্রামে রুগ্ণ হয়ে পড়েছে বিপুল সম্ভাবনার এ খাতটি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে পোশাক খাতে জাতীয় রপ্তানির পরিমাণ ছিল দেড় শ কোটি ডলার। এর মধ্যে চট্টগ্রামের অবদান ৫০ কোটি ডলার, যা ছিল মোট পোশাক রপ্তানির ৩৩ শতাংশ। আর ২০১৭ সালে তা নেমে এসেছে ১০ শতাংশের নিচে। বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা দেশের মোট রপ্তানির ১৩.৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম ইপিজেডের অবদান দেড় বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ইপিজেডের বাইরের কারখানাগুলো থেকে রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির আগে চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক কারখানা ছিল প্রায় ৭৫০টি। কিন্তু এরপর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কমপ্লাইয়েন্সগত ইস্যুতে টিকতে না পেরে প্রায় ৪০০ ছোট ও মাঝারি মানের কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিএমইএ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে বর্তমানে চালু কারখানা আছে ৩৫৯টি।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সব সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এখানে কোনো পরিকল্পিত গার্মেন্টপল্লী গড়ে না ওঠায় পোশাকশিল্পে জাতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের প্রভাব দিন দিন কমে এসেছে। এ ছাড়া অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণে নজর না দেওয়া এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ চট্টগ্রামের প্রতি সরকারের উপযুক্ত দৃষ্টির অভাবকেও দায়ী করেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা), চট্টগ্রাম চেম্বার সূত্র জানায়, ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশগত কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের প্রথম পছন্দ থাকে চট্টগ্রাম। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর কাছে হওয়ায় সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নাজিরহাট, আনোয়ারা, পটিয়া, চকরিয়া, মিরসরাইসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিকল্পিত গার্মেন্টপল্লী গড়ে তোলার সুযোগ থাকলেও উদ্যোক্তারা শহরের বাইরে গার্মেন্ট কারখানা গড়ে তুলতে সাহস পাচ্ছেন না। অদূর ভবিষ্যতে আদৌ গ্যাস পাওয়া যাবে কি না, রাস্তাঘাটের আশানুরূপ উন্নয়ন হবে কি না, এ ধরনের নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পাওয়ায় উদ্যোক্তারা সেদিকে যেতে পারছেন না। অথচ শহরতলিতে ছোট ছোট গুচ্ছ গার্মেন্ট কারখানাও যদি গড়ে তোলা যেত তাহলে চট্টগ্রামের গার্মেন্ট সেক্টরে বিরাজমান ৩০ শতাংশ শ্রমিক সংকটের নিরসন হতো বলে মনে করেন বিজিএমইএ নেতারা।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার চেম্বারের সভাপতি এবং বিজিএমইএর সাবেক নেতা এস এম নূরুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সমুদ্রবন্দর থাকার পরও পোশাক খাতে চট্টগ্রামের দিন দিন পিছিয়ে পড়া খুবই দুঃখজনক। অথচ শুধু বন্দর সুবিধাকে কেন্দ  করেই চট্টগ্রামে গার্মেন্ট খাতের আরো এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘গার্মেন্ট কারখানা গড়ে ওঠার জন্য এত বছরেও চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টপল্লী গড়ে ওঠেনি। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত সংকটের পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক সব কাজ ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ার কারণে গার্মেন্ট খাত এগোচ্ছে না।’

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এবং বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবু তৈয়ব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের উদ্যোক্তাদের উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। ঢাকায় বিশাল বিশাল কারখানা হচ্ছে আর আমরা গ্যাস-বিদ্যুতের না থাকার দোহাই দিয়ে নিজেদের গুটিয়ে ফেলছি। এটা আসলে দুর্বল যুক্তি। ঢাকায় যারা ব্যবসা করছেন তাঁরা অনেক বেশি সাহসী।’

তবে পিছিয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে শিল্প প্লটের অভাবকেই সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখেন তিনি। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর, আশুলিয়ায় বিঘাপ্রতি জমির দাম ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। চট্টগ্রামে এ দামে শহরের বাইরে ১০ গণ্ডা জমিও পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রামে জমির দাম অনেক বেশি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here