রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে এক বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় ও স্টাফদের কোচিং জ্যাকেট গেছে দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে। এ ছাড়া দর্শক ও সাধারণ ভক্তদের পলো শার্ট, টিশার্ট জার্সিসহ অন্যান্য পোশাকও রফতানি হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছিল এসব পোশাকের মূল গন্তব্য। তবে রফতানি বাজার হিসেবে অন্যান্য দেশেও গেছে বাংলাদেশের পোশাক। গত ছয় মাস ধরেই এসব পোশাক রফতানি হচ্ছে।
বিশ্বকাপের পোশাক হিসেবে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ রফতানি হয়েছে, আলাদা করে সেই তথ্য নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, অন্তত ১০০ কারখানায় এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে পোশাক উৎপাদন হয়েছে। কয়েক মাস ধরে পোশাক খাতে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে রফতানি তার পেছনে মূলত রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত ১১ মাসে পোশাক খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা থেকেও ৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এ সময়ের সব পণ্যের গড় রফতানি আয়ের তুলনায় এ হার বেশি। গড়ে রফতানি ৭ শতাংশেরও নিচে। চলতি ও আগামী দুই মাসের রফতানি আয়েও সেই ছাপ থাকবে। আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপ ফুটবল মহারণ চলবে মাসব্যাপী।
সাধারণত ওভেন (শার্ট, প্যান্ট) এবং নিট (গেঞ্জি জাতীয় পোশাক) এ দুই ধরনের পণ্যই রফতানি করে বাংলাদেশ। তবে বিশ্ব ক্রীড়া আসরে নিট পোশাকেরই প্রায় একচেটিয়া দাপট। এ কারণে গত কয়েক মাসে ওভেনের তুলনায় নিটের রফতানি আয় বেশি হয়েছে। চলতি বছরের ১১ মাসে নিটের রফতানি আগের একই সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। এ সময় ওভেনের রফতানি বেড়েছে ৮ শতাংশ।
নিট পোশাক রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে জানান, তার কারখানা এমবি ফ্যাশন স্পেনের দর্শক-ভক্তদের ২৫ হাজার পিস টিশার্ট রফতানি করেছে। দুই ডলার ৫৫ সেন্টের এসব টিশার্ট স্পেনে ১৫ থেকে ২০ ইউরোতে বিক্রি হবে। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তার জানা মতে অন্তত ১০০ কারখানার মালিক এ সময় বিশ্বকাপের পোশাক উৎপাদন করেছেন। এসব কারখানা দর্শক-ভক্তদের জন্যই জার্সি তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, গত অর্থবছরে পোশাক খাতের রফতানি আগের বছরের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ বেশি ছিল। অথচ চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসে সে তুলনায় অনেক বেশি। আর এক মাস পর এ বছর শেষে পোশাকের রফতানি কমপক্ষে ১২ শতাংশ বেশি হবে। সাধারণত বছরে গড় বৃদ্ধি ৩ থেকে ৪ শতাংশ হয়ে থাকে। বাকি বৃদ্ধি হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের সুবাদে। অর্থাৎ কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলার রফতানি বেশি হয়েছে এ কারণে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দর্শক-ভক্তদের জার্সির বাইরে মূল খেলোয়াড়দের জন্যও কিছু জার্সি এবং কোচিংয়ের সময় ব্যবহূত জ্যাকেটও তৈরি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক একটি কারখানা আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, স্পেন ও জার্মানির খোলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের জ্যাকেট উৎপাদন করেছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় ওই কারখানার নাম গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন কর্তৃপক্ষ।
বিজিএমইএর কয়েকজন পরিচালকের কারখানা থেকে সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল, ডেনমার্কের দর্শক-ভক্তদের জার্সি, ট্রাউজার, মোজা তৈরি হয়েছে।