জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীনে থাকা তৈরি পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষকে ভবনের কাঠামোগত, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ত্রুটির সংস্কারকাজ শেষ করতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক।
পোশাক কারখানার মালিকদের উদ্দেশে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিনীতভাবে বলছি, সংস্কারকাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করুন। না হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড অনেকে কারখানার প্রতি রূঢ় আচরণ করেছে। তেমন রূঢ় আচরণ আমরা করতে চাই না। আপনাদের কষ্ট হবে। আপনারা হয়তো আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু ব্যবসা করতে হলে কাজ শেষ করতে হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবনে আজ বৃহস্পতিবার এনটিএপির অধীনে থাকা পোশাক কারখানার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় শ্রমসচিব আফরোজা খান, অতিরিক্ত সচিব খোন্দকার মোস্তান হোসেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান ভূঁইয়া, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। এই দুই জোটের অধীনে ২ হাজার ৩৯৫ কারখানার পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে সংস্কারকাজ তদারকি করছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। রপ্তানিতে যুক্ত থাকা বাকি ১ হাজার ৫৪৯ পোশাক কারখানার পরিদর্শন করা হয় এনটিএপির অধীনে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহায়তায় এনটিএপির কার্যক্রম তদারকি করছে ডিআইএফই।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর জানিয়েছে, এনটিএপির অধীনে থাকা ১ হাজার ৫৪৯ কারখানার মধ্যে সক্রিয় আছে ৭৫৫টি। বাকি ৫৭৩ কারখানা বন্ধ, ৭৯টি ভাড়া ভবন থেকে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সে যোগ দিয়েছে ১৩০টি। ১২টি কারখানা ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত।
অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সদস্য কারখানাগুলোর ত্রুটি সংস্কারকাজে ভালো অগ্রগতি থাকলেও এনটিএপির অধীনে থাকা কারখানাগুলো বেশ পিছিয়ে আছে। গত আড়াই বছরে মাত্র ৭টি পোশাক কারখানা সব ধরনের ত্রুটি সংস্কারকাজ শেষ করেছে। ৩১ থেকে ৯৯ শতাংশ সংস্কারকাজ করেছে ৩৮৫ কারখানা। ২১ থেকে ৩০ শতাংশ সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে ৬৫ কারখানার। আর ১৯২ কারখানার অগ্রগতি মাত্র ১ থেকে ২০ শতাংশ। তবে ১৬৫ কারখানা কোনো কাজই করেনি। অন্যদিকে, অ্যাকর্ডের সদস্য কারখানার ত্রুটি সংস্কারকাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ। অ্যালায়েন্সের ত্রুটি সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮৯ শতাংশ।