Home Bangla Recent ৪৪২ কারখানায় অসন্তোষের আশঙ্কা শিল্প পুলিশের

৪৪২ কারখানায় অসন্তোষের আশঙ্কা শিল্প পুলিশের

আশুলিয়ার ইউনাইটেড ট্রাউজার। পোশাক খাতের এ কারখানার শ্রমিক সংখ্যা ২ হাজার ৫০০। ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে কারখানাটিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিল্প পুলিশ। অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর নাইন অ্যাঙ্গেল গার্মেন্টস ও আশুলিয়া জামগড়ার বাধন কর্পোরেশন লিমিটেডেও। কারখানা দুটিতে কাজ করছেন যথাক্রমে ৪০০ ও ৬০০ শ্রমিক।

বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে চামড়া ও আবাসনসহ মোট ৪৪২টি কারখানায়। এর মধ্যে ২৮৮টি পোশাক কারখানা। অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে এমন পোশাক কারখানার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য রয়েছে ১৬৫। বাকি ৮৬টি বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা। এর বাইরে বিটিএমএর সদস্য কারখানা রয়েছে ১৪টি।

দেশের শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনা। শিল্প পুলিশের হিসাব মতে, এসব অঞ্চলে সব খাত মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ৭৮টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২৮৮টি পোশাক কারখানা। বাকি ৩ হাজার ৭৯০টি অন্যান্য খাতের।

শিল্প পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, শিল্প অধ্যুষিত সব এলাকায়ই কম-বেশি অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে শিল্প পুলিশ ১ বা আশুলিয়ার কারখানাগুলো ঘিরে। শিল্প পুলিশের দাবি, এ এলাকায় বহিরাগত শ্রমিক নেতারা আছেন, যারা বিভিন্ন সময় সমস্যার সৃষ্টি করেন। এ কারণেই আশুলিয়া এলাকা ঘিরে বিশেষ নজরদারি রয়েছে শিল্প পুলিশের।

শিল্প পুলিশ ১ আশুলিয়ায় অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ৯৭টি। এর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৩১টি, বিকেএমইএর ১৭টি, বিটিএমএর ২টি ও অন্যান্য খাতের ৪৭টি। এসব কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩২৫।

শিল্প পুলিশ ২ গাজীপুরে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ১৩৩টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ৬৬টি, বিকেএমইএর ১৯টি ও বিটিএমএর সদস্য ৩টি। এছাড়া অন্যান্য খাতের ৪৫টি কারখানাও রয়েছে, যেগুলোয় অসন্তোষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অসন্তোষপ্রবণ এসব কারখানায় কাজ করছেন মোট ২ লাখ ১ হাজার ৩২৬ শ্রমিক।

শিল্প পুলিশ ৩ চট্টগ্রামে অসন্তোষপ্রবণ কারখানার সংখ্যা ৯২। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ৪৩টি, বিকেএমইএর ৪টি ও বিটিএমএর সদস্য ৭টি। বেপজার আওতায় ইপিজেডের কারখানা রয়েছে ১৪টি। এছাড়া অন্যান্য খাতের কারখানার সংখ্যা ২৪। বেতন-বোনাস ঘিরে অসন্তোষের আশঙ্কা থাকা এসব কারখানায় কর্মরত রয়েছেন মোট ৪১ হাজার ৬৭৯ শ্রমিক।

শিল্প পুলিশ ৪ নারায়ণগঞ্জে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা ৮৫টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ১১টি। এছাড়া বিকেএমইএর সদস্য কারখানা রয়েছে ৪৬, বিটিএমএর ৭ ও অন্যান্য খাতের কারখানা ২১টি। এসব কারখানায় কাজ করছেন মোট ৪০ হাজার ৭২৫ শ্রমিক।

শিল্প পুলিশ ৫ ময়মনসিংহে অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে বিজিএমইএ সদস্য ১৪টি, বিটিএমএর সদস্য ৪টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ৬টি। এছাড়া শিল্প পুলিশ ৬ খুলনায় অসন্তোষপ্রবণ কারখানা রয়েছে ১১টি। সব কারখানাই পোশাক খাতের বাইরের। এ অসন্তোষপ্রবণ কারখানাগুলোয় শ্রমিক রয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ১৮৩ জন।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক অ্যাডিশনাল আইজিপি আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, বরাবরের মতোই অসন্তোষের আশঙ্কা রয়েছে এমন কারখানার তালিকা করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে ঈদের সময় বড় কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। আশা করছি, এ বছরও কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে এমন কারখানাগুলোর সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও শ্রম অসন্তোষের কারণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। সব পক্ষই ঈদের আগে যেন কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পোশাক খাতের কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের চিহ্নিত কারণগুলোর মধ্যে আছে সাত থেকে আটদিন আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পরিশোধ না করা। পোশাক কারখানায় ঈদ বোনাসের পরিমাণ নির্দিষ্ট না থাকায় কারখানাভেদে তা ভিন্ন পরিমাণে দেয়া হয়। এতে কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়ে বোনাস প্রদান করলেও প্রাপ্ত বোনাসের পরিমাণ নিয়েও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকে।

ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব তৌহিদুর রহমান বলেন, ঈদের আগে যেন বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে কোনো অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। সময়মতো উৎসব ভাতা পরিশোধ না করলেই বেশির ভাগ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বন্ধের আগে উৎসব ভাতা পরিশোধ করার ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। আবার উৎসব ভাতার পরিমাণও আইনে নির্দিষ্ট না থাকায় দরকষাকষিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শ্রমিকরা।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তথ্যমতে, শ্রমিকদের বেতন ভাতা ঈদের আগে পরিশোধ করার বিষয়ে তত্পরতা অব্যাহত আছে। ব্যাংকগুলো আগের মতো সহযোগিতা করছে না বলে কিছু কারখানায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ কারণগুলো ছাড়াও সংগঠন প্রতিনিধিদের দাবি, বছর শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার লক্ষ্যে নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আবার ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। কিছু শ্রমিক সংগঠন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও ন্যূনতম মজুরি নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ১ হাজার ২০০ কারখানাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় রেখেছে সংগঠন।

বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিজিএমইএর ১৫টি টিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু কারখানায় সমস্যা আছে, ব্যাংকগুলো আগের মতো সহযোগিতা করছে না, তারপরও আমরা বলতে পারি প্রতিবারের মতো সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে শ্রমিক-মালিক সবাই মিলে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here