ইউরোপের বাইরে এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে দেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় বাড়ছে। এর মধ্যে ভারতের বাজারে রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। আর এশিয়ার বাজারগুলোতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার মতো অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও রপ্তানি আয় বেড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের পোশাক খাতের কারখানার মান উন্নয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তাদের শক্ত প্রতিশ্রুতির ফলে অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি আয় বাড়ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, পোশাক রপ্তানিতে ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। সেই বাজারেই বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের দেশটিতে আয় হয়েছে ২৮ কোটি ডলার। এর আগের বছর ছিল ১২ কোটি ডলারের একটু বেশি। বড় অঙ্কের রপ্তানি হয়েছে জাপান ও কোরিয়াতেও। সব মিলিয়ে এশিয়ার ২০টি দেশ থেকে আয় হয়েছে ২১২ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১৮৩ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া প্রধান দুই বাজারের বাইরে অপ্রচলিত বাজার থেকে আয় হয়েছে ৪৬৭ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৪২৪ কোটি ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের পোশাক খাতের বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব কারখানা হয়েছে। উন্নত কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিশ্রুতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফলে চায়না, ভারত, জাপানসহ এশিয়ার দেশগুলোতে আমাদের বাজার বাড়ছে। আগে আমাদের অন্যতম বাজার ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতের নতুন বাজারগুলোতে বেশ সুখবর ছিল। এ সময় অপ্রচলিত বাজারগুলোতে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। ভারতের স্থানীয় বাজারে বিশাল চাহিদা ও অশুল্ক বাধা দূর হওয়া এবং নিজের প্রয়োজেন এসব বাধা শিথিলায়নের ফলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব যখন ২০০৫ সালের পর কোটামুক্ত হলো বাংলাদেশ তখন তার সক্ষমতা অন্বেষণ করতে থাকে। ফলে ইউরোপ এবং আমেরিকায় সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়াতে থাকে। পোশাকের জন্য জাপানের বাজার সংবেদনশীল হওয়া সত্ত্বেও শিল্পমুক্ত সুবিধার সুবাদে এ বাজারে ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।’
একই সঙ্গে জাপানের মতো বাজারে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যের পোশাকের বাজার ধরতে শুরু করেছে। এ ছাড়া জাপানি ক্রেতারা আমাদের কারখানাগুলোতে অতি সতর্কতার সঙ্গে তাদের পোশাকগুলো তৈরি করে। এদিকে পোশাক খাতের নতুন সম্ভাবনার বাজার হিসেবে দেখা দিয়েছে লাতিন আমেরিকারও বাজার। পোশাকের বাজার বাড়ছে ব্রাজিল, চিলি এবং মেক্সিকোর মতো দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোতে। তবে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে রপ্তানি ও যোগাযোগ বাড়াতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যোগাযোগ।
ড. নাজনীন বলেন, ‘লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে একসময় যোগাযোগের তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। এমনকি প্রথম ২০০৯ সালে ব্রাজিলে বাংলাদেশের দূতাবাস হয়। এর পর থেকে আমাদের ব্যবসায়ীরা তাদের বাজার অন্বেষণে ওই সব দেশে যায়। ধীরে ধীরে ব্রাজিল, চিলি এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে। আর এ সুফল এখন পাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাকের খাতের ব্যবসায়ীরা।’
বিকেএমইএ সাবেক প্রথম সহসভাপতি এ এইচ আসলাম সানি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক খাত অনেকটা নতুন রূপে তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট কারখানা বন্ধ হলেও অনেক বড় কারখানা হয়েছে। এগুলো আকারে ও প্রযুক্তির দিক দিয়েও কয়েক গুণ বড়। এ ছাড়া চায়না মৌলিক পোশাক তৈরির থেকে পিছিয়ে পড়লে এসব কার্যাদেশ আফ্রিকার দেশগুলোতে যাওয়ার কথা থাকলে অবকাঠানো, শ্রমিকের দক্ষতা এবং ভাবমূর্তি ভালো না হওয়ায় ওই সব দেশে যায়নি।’