বাংলাদেশে শ্রমিকের মৌলিক অধিকার ‘মারাত্মকভাবে’ লঙ্ঘিত হচ্ছে জানিয়ে এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তদন্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনসহ (আইটিইউসি) একাধিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যনীতির আওতায় এতদিনেও তদন্ত না করায় ইউরোপীয় কমিশনের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ন্যায়পালের কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে। জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশকে অবশ্যই তাদের সুনির্দিষ্ট শ্রমমান রক্ষা ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। বাংলাদেশে শ্রমিকের মৌলিক অধিকার মারাত্মক ও পদ্ধতিগতভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে। লাখ লাখ শ্রমিকের অবস্থা এখন নিরাপদ নয়। এ ছাড়া শ্রমিকের স্বাধীনভাবে সংগঠন করার ক্ষেত্রে (ট্রেড ইউনিয়ন) বিদ্যমান শ্রম আইন বড় বাধা তৈরি করে রেখেছে। এ আইনেরও সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারখানা কর্তৃপক্ষের বিষয়ে শ্রমিকের অভিযোগ থাকলেও তা নিয়মিত উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং দর কষাকষির বিষয়ে শ্রমিকদের আইনি ক্ষমতা না থাকায় তারা দরিদ্র হচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশকে এ অবস্থার উন্নয়নে তাগিদ দিয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধার আওতায় এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কার্যক্রম চালায়নি। অথচ ইউরোপীয় কমিশনের কাছে এটি একটি বড় হাতিয়ার। অভিযোগে বলা হয়, কবে নাগাদ এ ধরনের তদন্ত শুরু করা যাবে, সে বিষয়েও ইউরোপীয় কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
অভিযোগকারী আইটিইউসি কয়েকটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের একটি জোট। এর সঙ্গে অভিযোগকারী হিসেবে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক শ্রমিক অধিকার সংস্থা ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন এবং অন্য একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। গত মাসে করা ওই অভিযোগ ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আইটিইউসি’র জেনারেল সেক্রেটারি শারান বুরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। ক্ষমতাবান মালিকপক্ষের জন্য নয়, যাদের অনেকেই শ্রমিক শোষণের ঘটনায় অভিযুক্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাতে তাদের এ সংক্রান্ত অঙ্গীকারের একটি পরিষ্কার বার্তা বাংলাদেশে পাঠায়, সে লক্ষ্যেই এ অভিযোগ।
অবশ্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, আইটিইউসি যে বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে অভিযোগ করেছে, তার সঙ্গে জিএসপি’র শর্ত সরাসরি সম্পর্কিত নয়। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, শ্রম অধিকারের বড় ধরনের কোনো লঙ্ঘন হলে সেটি করা যায়। এখনি এ ধরনের কোনো তদন্ত করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না।
গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, এ ধরনের অভিযোগের যৌক্তিকতার সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের শ্রম অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) আছে। শ্রম অধিকারে উন্নতি হয়েছে বলেই তারা স্বীকৃতি দিয়েছে। তা ছাড়া আইএলও’র পরামর্শের আলোকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন প্রক্রিয়া সহজ করা ছাড়াও বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব পণ্যই ইউরোপের বাজারে জিএসপির আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। বাংলাদেশের রপ্তানির বেশিরভাগই যায় ইইউভুক্ত ২৮টি দেশে। এর মধ্যে গার্মেন্টস পণ্য অন্যতম।