তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টার বেশি আলোচনা শেষে মালিকপক্ষের সময় বৃদ্ধির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মজুরি বোর্ড কর্তৃপক্ষ আগামী ১৬ জুলাই সাড়ে ৩টায় তৃতীয় সভার দিন ধার্য করেছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর তোপখানা রোডে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি বেগম শামসুন নাহার ভূঁইয়া ও বোর্ডের অন্য কর্মকর্তারা।
আলোচনা শেষে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান, দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত পোশাক খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণ নিয়ে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকে নিয়ে নির্ধারিত আলোচনা হয়। এতে নতুন মজুরি নির্ধারণে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উভয় পক্ষ তাদের মতামত তুলে ধরে।
তবে মালিকপক্ষ এখনো তাদের প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে না পারায় আরো ১০ দিনের সময় চায়। সবার সম্মতিতে তাই আগামী ১৬ জুলাই তৃতীয় সভার দিন ধার্য করা হয়েছে। আশা করি এ সময়ের মধ্যে উভয় পক্ষ তাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব দেবে।
বিজিএমইএ সভাপতি এ বিষয়ে বলেন, তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। তাই শিল্প এবং শ্রমিকের কোনো রকম ক্ষতি না হয় এসব বিবেচনা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাই মজুরি বোর্ডে নতুন মজুরি কাঠামো প্রস্তাবের আগে আমরা আরো ভালো করে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে চাই। আমাদের আশা আগামী সভায় চূড়ান্ত প্রস্তাব দিতে পারব।
শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি বেগম শামসুন নাহার ভূঁইয়া জানান, আমাদের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন তবে গ্রেড নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। এসব বিষয় নিয়ে শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আরো আলোচনা করে আগামী বোর্ড সভায় তা চূড়ান্ত করে প্রস্তাব দেব।
এদিকে ভেতরে যখন মজুরি বোর্ডের সভা হচ্ছিল। তখন বাইরে শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (জিস্কপ) সভা হয়। এ সময় সংগঠনের নেতারা ১৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি জানিয়ে বলেন, সম্প্রতি সরকার রাষ্ট্রীয় কারখানার শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে। এতে তাদের নতুন মজুরির মূল ধরা হয়েছে আট হাজার ৩০০ টাকা। আমরা হিসাব করে দেখেছি; তাদের অন্য ২১ ধরনের সুবিধাসহ মোট মজুরি দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৮০০ টাকা। তাই আমাদের দাবি নায্য এবং তা মেনে নেওয়ার দাবি করছি।
শ্রমিক নেতারা আরো বলেন, সরকারের কল-কারখানাগুলো লাভজনক না হলেও মাত্র ৮০ হাজার শ্রমিকের জন্য বিশাল মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। তাও আবার ২০১৬ সাল থেকে কার্যকর হবে। অন্যদিকে ৮৩ শতাংশ রপ্তানি আয়ের খাতের শ্রমিকের মজুরি নিয়ে সরকার টালবাহানা করছে। এ খাতে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক রয়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বা আড়াই লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্র আয় হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি শ্রমিকদের জন্য অত্যাধুনিক আবাসিক ভবন করা হলেও আমাদের জন্য এখন পর্যন্ত গার্মেন্ট পল্লী করা সম্ভব হয়নি।
শ্রমিক নেতা আব্দুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে এবং খালেকুজ্জামান লিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (জিস্কপ) সদস্যসচিব নইমুল আহসান জুয়েল।