এক সময় ডেনিম কাপড়ের জিন্স প্যান্ট খনি শ্রমিকরা পরতো। এখন সময় বদলেছে। স্থায়িত্ব, নিত্যনতুন ডিজাইন ও বৈচিত্র্যের কারণে দেশ-বিদেশে ডেনিম পণ্য সমানভাবে সমাদৃত।
হাল ফ্যাশনের অন্যতম উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেনিম জিন্স। যাকে বিশ্বব্যাপী তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। ডিনম জিন্স কাপড় দিয়ে এখন শুধু প্যান্টই তৈরি হয় না।
এর সঙ্গে শার্ট, ট্রাউজার, টি শার্ট, পলো শার্ট, জ্যাকেট, পাঞ্জাবিও তৈরি হচ্ছে। এ সব পোশাকের উপর নানা ধরনের কাজ করে বাড়ানো হচ্ছে এর মূল্যসংযোজনের হার।
চাহিদা বাড়ায় এর উৎপাদনও বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা টেকনাভিও’র তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলারের বাজার রয়েছে ডেনিমের। এ বিশাল বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ডেনিমের বাজারে প্রবৃদ্ধি হবে।
ইউরোপের বাজারে ডেনিম রফতানির শীর্ষে আছে বাংলাদেশ, আর যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় অবস্থানে। সম্প্রতি চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ স্থান দখলের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশের ডেনিমের বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ডেনিম জিন্সের চাহিদার কারণে বাংলাদেশেও এ খাতে বিপ্লব ঘটে গেছে। ডেনিম জিন্স তৈরির শতভাগ কম্পায়েন্স খারখানা তৈরির প্রবণতা বেড়ে গেছে।
এই খাতে বিনিয়োগও বাড়ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থান। ডেনিম পণ্য রফতানি করে দেশ মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। সব মিলে ডেনিম খাতে বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে।
বর্তমানে দেশে মোট ৩১টি প্রতিষ্ঠান ডেনিম জিন্স কাপড় উৎপাদন করছে। এগুলো সবই রফতানিমুখী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যমুনা ডেনিম, পারটেক্স ডেনিম, স্কয়ার ডেনিম, শাশা ডেনিম, মাহমুদ ডেনিম। সবগুলো প্রতিষ্ঠান বছরে ৪০ কোটি মিটার ডেনিম কাপড় উৎপাদন করে।
চাহিদার কারণে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই তাদের উৎপাদন সক্ষমতা আরও বাড়াচ্ছে। বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এইচএন্ডএম, ইউনিক্লো, টেসকো, ওয়ালমার্ট, লিভাইস, ডিজেল, জি স্টার, এস. অলিভার, হুগো বস, গ্যাপসহ আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি ডেনিমের বড় ক্রেতা।
তারা বাংলাদেশ থেকে ডেনিমের তৈরি পণ্য কিনে সেগুলো বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী ডেনিমের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। মৌসুমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মৌলিক মানের জিন্সের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের প্রিমিয়াম ডেনিম জিন্স তৈরি হচ্ছে এখন।
এ কারণে সারা বছরই ডেনিম কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল করতে পেরেছে। এতে আগ্রহী হয়ে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান ডেনিম উৎপাদনে এগিয়ে আসছে। তবে এই খাতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অপর্যাপ্ত গ্যাস-বিদ্যুৎ।
এখনও গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানায় উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হয়নি। আবার যে সব প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ আছে, সেগুলোতে কম প্রেসার থাকে। এ কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ইউরো স্টেটের তথ্য মতে, ইউরোপ অঞ্চলের মোট ডেনিমের ২৭ শতাংশ বাজার দখল করে আছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালে ১৩০ কোটি ইউরোর ডেনিম রফতানি হয়েছে, যা ২০১৬ সালের তুলনায় দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালে ১২৯ কোটি ইউরোর ডেনিম রফতানি হয়েছিল।
এ ছাড়া ২০১৫ সালে ১১৭ কোটি ইউরো, ২০১৪ সালে ৯৩ কোটি, ২০১৩ সালে ৮০ কোটি, ২০১২ সালে ৭২ কোটি, ২০১১ সালে ৫৯ কোটি এবং ২০১০ সালে ৪৪ কোটি ইউরোর ডেনিম পণ্য রফতানি হয়েছে ইউরোপে।
যদিও এ শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। তুরস্কের ডেনিমের ধারাবাহিক রফতানি প্রবৃদ্ধি দেশের রফতানিকারকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।
এ বিষয়ে ডেনিম এক্সপোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডেনিম এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ডেনিম রফতানিতে প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এর প্রমাণ হচ্ছে, আগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বিদেশে পণ্য দেখাতে নিয়ে যেত।
এখন বিদেশি ক্রেতারাই বাংলাদেশে আসছেন পণ্য দেখতে। এ সম্ভাবনা ধরে রাখতে হলে গ্যাস-বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারকে নজর দিতে হবে।
ব্যবসায়ীরা যাতে বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাস নিতে পারে সে বিষয়ে আরও মনোযোগী হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল দফতরের তথ্য মতে, ডেনিম রফতানিতে তৃতীয় স্থানে থাকা বংলাদেশ ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৫০ কোটি ডলারের ডেনিম পণ্য রফতানি করে, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালে ৪৬ কোটি, ২০১৫ সালে ৪৩ কোটি এবং ২০১৪ সালে ৪২ কোটি ডলারের ডেনিম রফতানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।