Home Bangla Recent দরকষাকষিতে ১০ শতাংশ মূল্য হারাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক

দরকষাকষিতে ১০ শতাংশ মূল্য হারাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে। ফলে বিশ্বের বড় ক্রেতাদের কাছে দরকষাকষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক অন্যান্য দেশের তুলনায় অন্তত ১০ শতাংশ কম মূল্য পাচ্ছে। এ কারণে প্রবৃদ্ধির দিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। চীনে শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় দেশটি শিল্পনীতিতে পরিবর্তন এনে অন্য খাতের ওপর জোর দিয়েছে। ফলে পোশাক খাতের এ বাজারে অংশগ্রহণ বাড়ছে বাংলাদেশসহ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর। গতকাল চট্টগ্রামের একটি পাঁচতারকা হোটেলে প্রাইসওয়াটারহাউজকুপারস (পিডব্লিউসি) আয়োজিত ‘ড্রাইভিং ট্রান্সফরমেশন ইন বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি পোশাক খাতের জন্য পর্যাপ্ত নয়। উচ্চশিক্ষিত অনেকেরই যোগাযোগ দক্ষতা, বোঝানোর ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব দেখা যায়। এ কারণে বিদেশী ক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষিতে আমাদের পণ্যের মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ কমে যাচ্ছে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে কর্মী এনে অনেক বেতন দিয়ে রাখছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন কারিগরি শিক্ষায় জোর দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাকে গরিবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলা হয়। কারিগরি শিক্ষার জোরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপানসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে অন্যান্য দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। এজন্য সরকারকে গতানুগতিক পড়াশোনার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজারে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ খাতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপের কারণে ব্যাপক গুণগত পরিবর্তন এসেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রগতি অন্যান্য খাত থেকে অনেক গুণ বেশি। সরকার কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাজার খুঁজে দেয়নি। বরং ব্যবসায়ীরাই বিভিন্ন দেশে তাদের বাজার খুঁজে নিয়েছেন। দেশের পোশাক খাত এখন চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু এ বন্দর কার্যত অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। একটি বিদেশী জাহাজকে কেন পাঁচ থেকে ১০ দিন খালাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে? জিল্লুর রহমানের মতে, ব্যবসায়ীদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করতে হবে। শুধু নিজেদের কারখানার উন্নয়ন করলেই চলবে না। সবাই মিলে সব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে একযোগে কাজ করলে পোশাক শিল্পের আরো উন্নতি সম্ভব।

পিডব্লিউসির পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা পল্লব দে বলেন, ২০১১ সালে যেখানে ৮৯ শতাংশ বিদেশী ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে কাপড় নিতে আগ্রহী ছিলেন, সেখানে ২০১৭ সালে এ হার ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এর পরও বাংলাদেশের কাপড়ের মানের কারণে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা অনেক দেশের তুলনায় ভালো। তবে বিশ্ববাজারে এ খাতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে দক্ষ শ্রমিক, ভালো ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা, কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ নানামুখী পরিকল্পনা নিতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে পিডব্লিউসির ম্যানেজিং পার্টনার মামুনুর রশিদ বলেন, বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে চীনের শেয়ার কমেছে। ফলে বাংলাদেশ এখন জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানের বাজারে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমাদের এখন বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এ কারণে টিকে থাকতে হলে আমাদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করতে হবে। কূটনৈতিক তত্পরতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ীদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করতে হবে।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, বিজিএমইএর পরিচালক আবু তৈয়ব, পিডব্লিউসির পরিচালক অরুণ রায়চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার পরিচালকরাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here