সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির চেয়ে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছর পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের। সেবার প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ২২ শতাংশ বা ৮৩ কোটি ১৯ লাখ ডলার কম হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, বরাবরের মতো তৈরি পোশাক রপ্তানির কারণেই সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা বজায় আছে। বিদায়ী অর্থবছরের মোট রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। কয়েক মাস আগেও মোট পণ্য রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান ৮১ বা ৮২ শতাংশে ঘুরপাক খাচ্ছিল।
সব মিলিয়ে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের খাত পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার আয় হয়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ হাজার ৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তার মানে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর তার আগের বারের চেয়ে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ২৪৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছর পোশাক রপ্তানিতে ভয়াবহ ধস নামে। সেবার পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। সেই হিসাবে পোশাক রপ্তানি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে পোশাক কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ আছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের বেশ কয়েকজন শিল্পমালিক।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমরা পোশাক কারখানার সংস্কারকাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বিভিন্ন সময় বলেছে, আমাদের কারখানাগুলো নিরাপদ ও কমপ্লায়েন্ট। ফলে আমাদের ভাবমূর্তি নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, সেটি দূর হয়েছে। ক্রেতাদেরও আস্থা ফিরেছে। তা ছাড়া সারা বিশ্বের মধ্যে আমরা মান ও সময়মতো পণ্য সরবরাহে বর্তমানে অদ্বিতীয়। সে জন্য পোশাক রপ্তানি ভালো অবস্থায় রয়েছে।’
ইপিবির হিসাবে, বিদায়ী অর্থবছরে ১০৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রপ্তানি হওয়া ১২৩ কোটি ডলারের চেয়ে ১২ শতাংশ কম। বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৩৮ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়া পণ্য রপ্তানি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ শতাংশ কম রপ্তানি আয় হয়েছে। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্পকারখানা সরিয়ে নেওয়ার কারণে রপ্তানিতে তার কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের শিল্পমালিকেরা।
এদিকে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি থেকে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আয় হয়েছে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ১৫ কোটি ডলারের কাঁচা পাট, ৬৪ কোটি ডলারের পাটের সুতা, ১২ কোটি ডলারের পাটের বস্তা ও ৬ কোটি ডলারের অন্যান্য পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৬৭ কোটি ডলার কৃষিজাত পণ্য, ৫০ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য ও ৩৫ কোটি ডলারের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হয়েছে।