কোনো রকম আইনের তোয়াক্কা না করেই তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেছে বলে দাবি করেছে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা। অন্যদিকে মালিকদের প্রতিনিধিরা মনে করেন গত পাঁচ বছরের মূল্যস্ফীতি এবং শিল্পের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে ২০ শতাংশ বেশি ধরে শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি কাঠামোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর তোপখানা রোডে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মালিকপক্ষের প্রতিনিধি তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি বেগম শামসুন নাহার ভূঁইয়া ও বোর্ডের অন্য কর্মকর্তারা।
মজুরি বোর্ডে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাব শেষে বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় খাত পোশাক খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণ নিয়ে মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষকে নিয়ে নির্ধারিত আলোচনা হয়। এতে নতুন মজুরি নির্ধারণে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে উভয় পক্ষ তাদের প্রস্তাব দেয় বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানান, বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রস্তাব ছিল ৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল ধরে মোট মজুুরি প্রস্তাব করা হয় ৬ হাজার ৩৬০ টাকা এবং শ্রমিকদের পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয় সাত হাজার ৫০ টাকা মূল ধরে ১২ হাজার ২০ টাকা। তিনি আরো জানান, বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ প্রায় শেষ তাই আইন অনুসারে বোর্ডের পক্ষে আরো তিন মাসের জন্য সময় বৃদ্ধির জন্য গত রবিবার আবেদন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
এক প্রশ্নের জবাবে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান জানান, নতুন মজুরি প্রস্তাবের আগে কারখানা পরিদর্শন করে মতামত নেওয়া হবে। তবে ওই মতামত তাঁদের পক্ষে এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানান। এ ছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁরা শ্রমিক ও মালিকদের প্রস্তাবগুলো আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি বেগম শামসুন নাহার ভূঁইয়া বলেন, মালিকপক্ষ যে প্রস্তাব মজুরি বোর্ডে দিয়েছে তা কোন বিবেচনায় দিয়েছে আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ১৩১ এবং বাংলাদেশের শ্রম আইনের ধারা ১৪১ কোনোটাই তারা মানেনি।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিক সংগঠনগুলো থেকে কেউ ১৬ কেউ ১৮ হাজার টাকার ন্যূনতম মজুরির দাবি করেছে। তবে আমরা শ্রমিকের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং শিল্পের সক্ষমতাসহ সার্বিক বিবেচনায় নিয়েই আমাদের প্রস্তাব করেছি। শিল্পের কোনো সক্ষমতা নেই এবং শ্রমিকদের বেকার হতে হবে এমন কোনো দাবি আমরা করিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ২০১৮ সালে ১০টি বেসরকারি খাতের মজুরি নির্ধারণ করেছে সরকার। এসব মজুরি সামঞ্জস্য রেখে এবং মূল্যস্ফীতিকে বিবেচনায় নিয়েছি। সেই হিসেবে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মালিকের সক্ষমতা এবং উৎপাদন ব্যয় এবং পোশাক বিক্রির ধারাবাহিকতাও এ প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরাই শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য সরকারকে প্রস্তাব করেছিলাম।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক শিল্পে নিম্নতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা কার্যকর হয়। এর মধ্যে মূল মজুরি ৩ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা এবং চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্যভাতা ১ হাজার ১০০ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরের আগে পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল ৩ হাজার টাকা। একেকটি মজুরিকাঠামো পাঁচ বছরের জন্য গঠন করা হয়।