চলতি মাসের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করে তা ঘোষণা করা না হলে যেকোনো সময় পোশাক খাত অধ্যুষিত এলাকা আশুলিয়া বা গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর তোপখানা রোডের নির্মল সেন অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ আশঙ্কার কথা জানান। এ সময় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বজলুর রহমান বাবলু। তিনি বলেন, এ আশঙ্কা থেকেই তাঁদের আজকের সংবাদ সম্মেলন।
সংগঠনের নেতারা বলেন, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি সরকার পোশাক খাতের জন্য ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ঘোষণা করে। কিন্তু প্রায় ছয় মাস সময় অতিক্রম হতে যাচ্ছে। আর এ সময়ের মধ্যে মাত্র দুটি বোর্ড সভা হয়েছে। জানা যায়, মালিকপক্ষ কৌশলে এই সময় ক্ষেপণের পরিকল্পনা নিয়েছে। যাতে নির্ধারিত সময়ে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন না হয়। গত রবিবার অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকেও মালিকরা কোনো প্রস্তাব জমা দেননি। একই সঙ্গে তাঁরা আরো ১০ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। অথচ এ সময়ের মধ্যে মাসে দুটি করে হলেও কমপক্ষে ১২টি সভা হতে পারত বলে তাঁরা মনে করেন।
সময়মতো নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের আশঙ্কা করে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে যে সরকার থাকবে; তারা শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বাস্তবায়ন নিয়ে তারা কাজ করবে না। ফলে এ খাতের মজুরি নির্ধারণ ঝুলে যাবে। তিনি আরো বলেন, সরকার তার রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার শ্রমিকদের মজুরি ঘোষণা করেছে সম্প্রতি। কিন্তু রপ্তানির সিংহভাগ আয়ের খাত তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সরকার ও মালিকপক্ষ এখনো টালবাহানা করছে।
বাবুল আরো বলেন, বর্তমান মজুরি বোর্ডের মেয়াদ ছয় মাস। আগামী ১৪ জুলাই এর মেয়াদ শেষ হবে। এর ফলে অনুমান করা যায়, বর্তমান মজুরি বোর্ডের স্থবিরতার কারণে এ বোর্ডের অকাল মৃত্যু হবে। তাই মজুরি নিয়ে মুলা ঝোলানোর খেলা বন্ধ করে জুলাই মাসের মধ্যে ১৬ হাজার টাকার নতুন মজুরি ঘোষণার দাবি জানান তিনি। অন্যথায় শ্রমিকরা যেকোনো নিয়মতান্ত্রিক কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
৪৫ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের এই শান্তিপূর্ণ দাবিকে মেনে না নিয়ে অস্থির করে তোলা হলে মালিকদের এর দায় নিতে হবে উল্লেখ করে বাবুল বলেন, এরই মধ্যে পোশাক খাত অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বিস্ফোরণ দেখা দিতে পারে। তাই মুলা না ঝুলিয়ে শ্রমিকদের নায্য দাবির প্রতি সম্মান দেখানোর পরামর্শ দেন তিনি।
গত রবিবার তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর তোপখানা রোডের মজুরি বোর্ড কার্যালয়ে। এ সভা কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। পরে মালিকপক্ষের আবারও সময় বাড়ানোর আবেদন করে। এ প্রেক্ষাপটে বোর্ড কর্তৃপক্ষ আগামী ১৬ জুলাই সাড়ে ৩টায় তৃতীয় সভার দিন ধার্য করেছে।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর তৈরি পোশাক শিল্পে নিম্নতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে মূল মজুরি তিন হাজার টাকা, বাড়িভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা এবং চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্যভাতা এক হাজার ১০০ টাকা। ওই বছরের ডিসেম্বরের আগে পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ছিল তিন হাজার টাকা। একেকটি মজুরি কাঠামো পাঁচ বছরের জন্য গঠন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মোসাদেক হোসেন স্বপন। এ ছাড়া ছিলেন শ্রমিক নেতা এম দেলওয়ার হোসেন, মাহতাব উদ্দিন শহীদ প্রমুখ।