গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ডের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় কারখানা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিকদের শোভন মজুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানবন্ধনে শ্রমিক নেতারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মালিকদের একতরফা বক্তব্য শুনে কোনরুপ সিদ্ধান্ত নিবেন না। কারণ আপনি ১৬ কোটি মানুষের প্রধানমন্ত্রী। আপনার ৪০ লক্ষ পোশাক শ্রমিকের জীবন জীবিকার প্রশ্নে শোভন একটি মজুরি জাতীয় নির্বাচনের বছরে ঘোষনা করবেন বলে শ্রমিকরা আশাবাদী।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ওই মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সমন্বয়ক মাহাতাব উদ্দিন সহিদ। এ সময় বক্তব্য দেন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল হক আমিন, তৌহিদুর রহমান, সালাউদ্দিন স্বপন, দেলোয়ার হোসেন, বজলুর রহমান বাবলু, কামরুল হাসান, বিলস্’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ, জলি তালুকদার, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, আবুল হোসাইন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ইতোমধ্যে পোশাক মালিকদের সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পরও তাদের সমস্যা ও চাওয়া-পাওয়ার কোন সীমারেখা নাই। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ১৬ হাজার টাকা মজুরি ঘোষনার দাবী জানিয়ে বলেন, শিল্পে কোন রকম অসন্তোষ দেখা দিলে মালিক পক্ষ দায়ী থাকবে।
বক্তারা বলেন, বলেন, আমরা গত ১৬ জুলাই গামেন্টস শ্রমিকদের মজুরি পূননির্ধারনের জন্য গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সভায় মালিক প্রতিনিধি কর্তৃক ৬ হাজার ৩৬০ টাকা ও শ্রমিক প্রতিনিধি কর্তৃক ১২ হাজার ২০ টাকা প্রস্তাব পেশ করায় হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। ২০১৩ সালে মজুরি ঘোষনার পরে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে মজুরি ইনক্রিমেন্ট হওয়ার কথা। সে হারে ইতিমধ্যে ৪ বছরে ২০ ভাগ মজুরি ইনক্রিমেন্ট হয়ে থাকলে বর্তমানে ৭ম গ্রেডের শ্রমিকদের ৬ হাজার ৪শ’ টাকা মজুরি উন্নীত হয়েছে। অপরদিকে দেশের অধিকাংশ জোট ও সংগঠনের ১৬ হাজার টাকার দাবীকে পাশ কাটিয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি ১২ হাজার ২০ টাকার প্রস্তাব পেশ করে দেশের শ্রমিকদের সাথে প্রতারনা করেছে। উভয়ের প্রস্তাব ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ জানুয়ারি গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের নভেম্বরে এ খাতের শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করা হয়। ৫ হাজার ৩শ’ টাকার ন্যুনতম ওই মজুরি কার্যকর হয় ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে। তবে ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে নতুন মজুরির দাবিতে আন্দোলন করতে থাকে শ্রমিকরা। ২০১৬ সালের শেষ দিকে ওই আন্দোলনে আশুলিয়ায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক হঠাত্ কর্মবিরতিও পালন শুরু করে। এর জেরে মামলা ও চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটে। ফলে ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ফের আলোচনা তৈরি করে। এর পর নানা আলোচনার পর চলতি বছরের শুরুতে সরকার নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে।