বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিদেশি ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সকে বর্ধিত মেয়াদ শেষে এ দেশ থেকে চলে যেতে হবে। এরপর কোনোভাবেই তাদের আর সময় দেয়া হবে না। তখন পোশাক খাতে তাদের পরিপূরক হিসেবে কারখানার কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তদারকির দায়িত্ব পালন করবে- সংস্কার সমন্বয়ক সেল বা রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি)। মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে হোটেল পূর্বাণীতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ন্যায্য দাম দিতে বিদেশি ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাত এখন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও কর্মবান্ধব। শ্রম আইন সংশোধন করে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো আধুনিক করা হয়েছে। বিশ্বমানের কারখানায় বাংলাদেশে পোশাক তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক ক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছে না। এটা বাড়াতেই হবে। না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা টিকবে কিভাবে? শ্রমিকের স্বার্থরক্ষাই করবে কিভাবে? তাই আশা করছি- আপনারা (ক্রেতারা) বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন।’
‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব রিমেডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) শেয়ারিং প্রোগ্রেস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক কর্মশালায় ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ছাড়া এবং অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সভুক্ত ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে শ্রম সচিব আফরোজা খানম, এফবিসিআিইর সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএ এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী ক্রেতাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব, শ্রমিকবান্ধব এবং ব্যবসায়ীবান্ধব। প্রধানমন্ত্রী সব শ্রেণীর কথা ভাবেন। শ্রমিকরা আমাদের জীবন, আমাদের প্রাণ। মজুরি কমিশনের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি পাবে। তবে মনে রাখতে হবে বেতন বৃদ্ধি হল কিন্তু পণ্যের মূল্য বাড়ল না, তাহলে ব্যবসায়ীরা টিকবে কিভাবে? তারা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে, তাই বিদেশি ক্রেতাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’
অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ৭ মে তাদের নির্ধারিত ৫ বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে ইতিমধ্যে সরকার কর্তৃক তাদের ৬ মাস বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে। এই বর্ধিত সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে আর সময় বাড়ানো হবে না। এ বিষয়ে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত সাসটেইনিবিলিটি কম্প্যাক্টের ৪র্থ পর্যালোচনা সভায় তাদের মেয়াদ বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। আমরা জানিয়ে দিয়েছি- বাংলাদেশ নিজেই এ কাজ করতে এখন সক্ষম। আরসিসিকে দক্ষ জনবল দিয়ে সাজানো হয়েছে। কারখানাগুলোর কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে। ফলে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাদের পরিপূরক হিসেবে আরসিসি দায়িত্ব পালন করতে সক্ষমতা অর্জন করবে।’
চাপ দিয়ে কাজ হবে না- শ্রম প্রতিমন্ত্রী : একই অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক জানান, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দেশ থেকে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স চলে যাবে। এই অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স যে কাজ করেছে তার চেয়ে ভালো কাজ করবে আরসিসি। আমরা দায়িত্ব নিতে সক্ষম। নিশ্চয়তা দিচ্ছি তারা (অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স) যে কাজ করেছে, তার চেয়ে ভালো কাজ করবে আরসিসি। তিনি আরও বলেন, ‘আরসিসির কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৩০টির বেশি সভা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৫৫টি কারখানার সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। তাদের চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন না করলে তাদের কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।’
পরে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের মেয়াদ বাড়াতে বিদেশিদের কাছ থেকে কোনো চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাপ থাকতেই পারে, সেদিকে আমাদের কোনো দৃষ্টি নেই। চাপটাপ বুঝি না। তবে মনে রাখতে হবে চাপ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে কিছু আদায় করা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটেনি। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি দেশে আর রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটবে না।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের আওতাধীন ১ হাজার ৫৪৯টি রফতানিমুখী পোশাক কারখানার সংস্কার কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভবনের কাঠামোগত বিষয়ে দেখভাল করা, অগ্নি এবং বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডাইফ’র অধীনে ২০১৭ সালের ১৪ মে এই ‘সংস্কার সমন্বয় সেল বা (আরসিসি) গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে আরসিসির সক্ষমতা বাড়াতে ৬০ প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম শেষ হয়েছে। শিগগিরই আরও ৪০ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থার কর্মীসহ মোট ১৩০ জন এখানে কাজ করবে। অন্যদিকে এরই মধ্যে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সভুক্ত ২ হাজার ৫৫৯টি কারখানার সংস্কার কাজ এরই মধ্যে প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।