Home Bangla Recent লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি : গার্মেন্ট খাতনির্ভর রফতানি প্রবৃদ্ধি

লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি : গার্মেন্ট খাতনির্ভর রফতানি প্রবৃদ্ধি

অর্থবছরের শেষ মাসেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি; লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮৩ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘাটতি; চামড়া, পাটসহ বেশির ভাগ খাতে লক্ষ্য অর্জন হয়নি

rmg workers

রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। কিন্তু এ সন্তুষ্টি শুধু তৈরি পোশাক শিল্প খাতনির্ভর। অতৃপ্তি হলো লক্ষ্যমাত্রায় ঘাটতি এবং অর্থবছরের শেষ মাস জুনে লক্ষ্যমাত্রা ও প্রবৃদ্ধি দুটোই নেতিবাচক। চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য, পাট ও পাটজাতপণ্যসহ বেশির ভাগ রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা সদ্যবিদায়ী অর্থবছর ২০১৭-১৮ অর্জিত হয়নি। ফলে সার্বিকভাবে লক্ষ্যমাত্রায় এবারে ঘাটতি হলো ৮৩ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার বা ২ দশমিক ২২ শতাংশ।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো গতকাল বিদায়ী অর্থবছরে তার অর্জিত আয়ের সর্বশেষ হিসাব চূড়ান্ত করেছে। তাদের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর রফতানি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে প্রকৃত অর্জন তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর প্রাথমিক পণ্য খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। এখানে সবচেয়ে বড় আয় এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ১৬ কোটি ডলার, যার বিপরীতে প্রকৃত অর্জন তিন হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হলো ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছর তৈরি পোশাক খাতে আয় হয়েছিল দু’হাজার ৮১৪ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে এক হাজার ৫১৮ কোটি ৮৫ লাখ ১০ ডলার আয় হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে, যা ল্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি। আর নিট খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্য দিকে ওভেন গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে এক হাজার ৫৪২ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় হয়েছে, যা ল্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি হিমায়িত খাদ্যে ৪.৯৭ শতাংশ, পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যে ৮৬.৫২ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্যে ২১.৪৩ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্যে ২.৭৯ শতাংশ, হোমটেক্সটাইলে ০.১৫ শতাংশ, অন্যান্য ফুটওয়্যার খাতে ৯.৬ শতাংশ এবং প্রকৌশল পণ্য খাতে ৫৯.৩৭ শতাংশ।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে জুনে রফতানি আয় বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। ওই মাসে আয়ের ল্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, কমেছে প্রবৃদ্ধিও। জুনে রফতানি আয়ের ল্যমাত্রা ছিল ৩৬২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ২৯৩ কোটি ৯৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা ল্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। এমনকি তার আগের অর্থবছরের চেয়েও প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ কম অর্জিত হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক ডিজি ড. মুস্তফা কে মুজেরীর মতে, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন যাতায়াতব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো। এখানে যাতায়াতে সময় বেশি লাগে। তৈরি পোশাক খাতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা শুধু মূল্য কম পণ্য রফতানি করি। কিন্তু মূল্যবেশি পণ্যে আমাদের রফতানি কম। তিনি বলেন, এখানে শ্রমের মজুরি কম। আমাদের ব্যবসায় ব্যয় কমাতে হবে। আমরা তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের ৮০ শতাংশ পাচ্ছি। কিন্তু একক পণ্যের ওপর থেকে আমাদের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। রফতানি বহুমুখীকরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পণ্য খাতে যত বেশি প্রবৃদ্ধি হোক না কেন কোনো লাভ নেই। কারণ আমাদের রফতানির বড় অংশ আসে ম্যানফ্যাকচারিং খাত থেকে। সেখানে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। সে তুলনায় আমরা এগোতে পারছি না।

এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীর মতে, দেশের রফতানি খাতগুলোর বেশির ভাগেরই ল্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সব খাতকে ভালো করতে হলে সরকারের উচিত সার্বিকভাবে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার বাজারে আমাদের টিকে থাকা কষ্টকর হচ্ছে। কারণ মজুরি বৃদ্ধির কারণে এখানে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় ১৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে পণ্যমূল্যের ওপর।

তার মতে, এ দেশের তৈরি পোশাক শিল্প একটা চাপের মধ্যে রয়েছে। আমাদের সমতা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সের শর্তানুযায়ী এ শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারকাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here