Home Bangla Recent শতভাগ সংস্কার ১ শতাংশেরও কম কারখানায়

শতভাগ সংস্কার ১ শতাংশেরও কম কারখানায়

রানা প্লাজা ধসের পর জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিপিএ) আওতায় অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় উদ্যোগে শুরু হয় পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রম। এর মধ্যে জাতীয় উদ্যোগের আওতায় শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন করেছে ১ শতাংশেরও কম কারখানা। তবে আন্তর্জাতিক দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতাধীন কারখানায় সংস্কার অগ্রগতি এর চেয়ে অনেক ভালো।

জানা গেছে, এনটিপিএর আওতায় পরিদর্শনের মাধ্যমে মোট ৩ হাজার ৭৮০টি কারখানার প্রাথমিক মূল্যায়ন করেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জোট। এর মধ্যে ইউরোপভিত্তিক ক্রেতা ও শ্রম অধিকার সংস্থার জোট অ্যাকর্ডের আওতায় ১ হাজার ৫০৫টি কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ১২২টিতে (৪ শতাংশ) শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। উত্তর আমেরিকাভিত্তিক অ্যালায়েন্সের আওতায় রয়েছে ৮০৯টি কারখানা, যার মধ্যে ৩৬৪টিতে (৪১ শতাংশ) শতভাগ সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৯টি। এর মধ্যে সক্রিয় কারখানার সংখ্যা ৭৫৫টি, যার মাত্র ৭টিতে শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র: বর্ণিক বার্তা

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতাভুক্ত কারখানাগুলো পরিদর্শনে শনাক্ত হয়েছে অনেক ত্রুটি। এগুলো সংস্কারে সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে সংস্কার সম্পন্ন না হওয়ায় দুই শতাধিক কারখানার সঙ্গে সম্পর্কও ছেদ করেছে জোট দুটি। এছাড়া অনেক কারখানার ত্রুটি সংশোধন কাজ চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে এ দুই জোটের আওতাধীন সক্রিয় কারখানাগুলোয় ৮৫ শতাংশের বেশি সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অথচ জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা সক্রিয় কারখানাগুলোর মধ্যে শনাক্ত হওয়া ত্রুটির সংস্কার শতভাগ সম্পন্ন করেছে এমন কারখানা মাত্র সাতটি। সে হিসেবে জাতীয় উদ্যোগের আওতাভুক্ত মাত্র দশমিক ৯২ শতাংশ কারখানা শতভাগ সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে।

জাতীয় উদ্যোগে পোশাক খাত মূল্যায়ন শুরু হয় ইমপ্রুভিং ওয়ার্কিং কন্ডিশন ইন দ্য রেডিমেড গার্মেন্ট সেক্টর শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কারিগরি সহায়তায় আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীর অর্থায়নে এ কর্মসূচিতে কারখানার প্রাথমিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এ কর্মসূচির নেতৃত্বে আছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, জাতীয় উদ্যোগের আওতায় মূল্যায়ন হওয়া ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানার সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছে ডিআইএফই। সংস্থাটির পরিদর্শকদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানার মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৫৭৩টি। বিদ্যমান ঠিকানা থেকে স্থানান্তর হওয়া কারখানা রয়েছে ৭৯টি। রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) আওতায় থাকা কারখানা আছে ১২টি। অ্যাকর্ডের আওতায় চলে যাওয়া কারখানার সংখ্যা ১৩০টি। প্রাথমিক মূল্যায়নে শনাক্ত হওয়া ত্রুটি সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় সক্রিয় আছে বাকি ৭৫৫টি কারখানা। এ কারখানাগুলোর সংস্কার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করছে ডিআইএফই পরিদর্শকরা।

ডিআইএফই সূত্র জানিয়েছে, ৭৫৫টি কারখানার সংস্কার কাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে নিজস্ব ভবনে অবস্থিত কারখানা ৩৩২। এ কারখানাগুলোর সংস্কার অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ। ভাড়া ভবনে অবস্থিত কারখানা ৪২৩টি, এ কারখানাগুলোর সংস্কার কাজের অগ্রগতি ২৭ শতাংশ। ১৬৫টি কারখানা আছে, যারা কোনো ধরনের সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেনি। এ কারখানাগুলোর মধ্যে নিজস্ব ভবনে ৭৩টি এবং বাকি ৯২টি ভাড়া ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জাতীয় উদ্যোগের আওতায় সংস্কার কার্যক্রম ১ থেকে ২০ শতাংশ সম্পন্ন হওয়া কারখানা রয়েছে ১৯২টি। এর মধ্যে নিজস্ব ভবনে রয়েছে ৬৮টি। বাকি ১২৪টি ভাড়া ভবনে। ২১ থেকে ৩০ শতাংশ সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে— এমন কারখানা মোট ৬৫টি, যার ২২টি নিজস্ব ভবনে এবং ৪৩টি ভাড়া ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংস্কার কার্যক্রম ৩১ থেকে ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা মোট ৩৮৫টি। এর মধ্যে ১৪১টি নিজস্ব ভবনে, বাকি ১২৬টি ভাড়া ভবনে অবস্থিত। সংস্কার কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে এমন কারখানা মাত্র সাতটি। এ হিসেবেই সক্রিয় ৭৫৫টি কারখানার মধ্যে সংস্কার কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা কারখানার হার দশমিক ৯২ শতাংশ।

ডিআইএফইর তথ্যমতে, সংস্কার কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন করা কারখানাগুলোকে সনদ প্রদান করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। আর যে কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম অগ্রগতি কম, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ওই আলোচনায় সংস্কার অগ্রগতি কম হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ জানাতে পারেননি কারখানা মালিক ও প্রতিনিধিরা। এ অবস্থায় মালিকদের কোনো অজুহাতই আর গ্রাহ্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থ কোনো কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে না— এমন সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মালিকদের।

এ বিষয়ে ডিআইএফই মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভুইয়া বলেন, কারখানা সংস্কার শতভাগ সম্পন্ন যারা করেছে, তাদের সনদ দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যাদের অগ্রগতি কম, তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেননি। অনেকে ভাড়া ভবনে কারখানা রয়েছে এমন অজুহাত দেখিয়েছেন। যদিও আমাদের হিসাবে সেই সংখ্যাটা বেশি নয়।

তিনি বলেন, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতাভুক্ত কোনো কারখানা সংস্কার কাজ সম্পন্ন না করলে সে খবর ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকার কারণেই তাদের সংস্কার অগ্রগতিও ভালো। কিন্তু জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা কারখানাগুলোয় ক্রেতার পক্ষ থেকে কমপ্লায়েন্ট হওয়ার কোনো চাপ নেই। এজন্য ত্রুটি সংস্কারে মালিকদের আগ্রহও কম। তবে এখন আমরাই চাপ প্রয়োগের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ত্রুটিপূর্ণ কারখানা নিয়ে এখন পোশাক খাতে আর ব্যবসা করা যাবে না। এটাই চরম বাস্তবতা। এ বিষয়ে সরকারি পদক্ষেপে আমরাও সহযোগিতা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here