তৈরি পোশাক খাত রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিধি-বিধান জ্ঞান কম। ফলে বিলম্ব রফতানির কারণে অর্থায়নে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এ খতে অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৬ শতাংশ ব্যাংকারের ধারণা পোশাক খাতের অর্থায়নে বড় বাধা বিলম্ব রফতানি। আবার রফতানিকারকরা সঠিক কাগজ-পত্র উপস্থাপন না করার কারণে অর্থায়নে জটিলতা তৈরি হয় বলে মনে করেন ৫৩ শতাংশ ব্যাংকার। তাই তৈরি পোশাক খাতের অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
রবিবার রাজধানীর বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনস ইন আরএমজি বাই ব্যাংকস : রিস্কস এ্যান্ড মিটিগেশন টেকনিকস’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। গবেষণা কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহমুদ হোসেন, বিকেএমইএ দ্বিতীয় সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন প্রমুখ।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মোঃ আহসান হাবীব। মূল প্রবন্ধে আহসান হাবীব বলেন, গ্রাহকদের ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য সেবার মান আগের চেয়ে ভাল। তবে পুরোপুরি কমপ্ল্যায়েন্স মানার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৈরি পোশাক খাতের ওপর। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন দিক প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়।
অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে ঝুঁকি কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতিগত সহায়তা দিতে হবে। পোশাক রফতানিতে ব্যাংকের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির জায়গা সাব-কনট্রাক্ট। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাব-কনট্রাক্টের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
ইয়াছিন আলি বলেন, দেশ থেকে ঋণের নামে অর্থ পাচার বড় অপরাধ। ব্যাংক কর্মকর্তারা জেনেও অনেক ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারে না। তবে একটি ফাঁস হলে তখন অন্য ঘটনাগুলো সামনে চলে আসে।
এবিবি চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংককে উদ্যোগ নিয়ে নজরদারি করতে হবে। এতে কোন অসঙ্গতি থাকলে তা দূর সম্ভব হবে।
এনআরবি ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্য ঝুঁকিমুক্ত করতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে দেশে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। রফতানিকারকদেরও নিজস্ব দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।
ব্যবসায়ী ফজলে শামীম এহসান বলেন, নানা কারণে ৬৫ শতাংশ রফতানি নির্দিষ্ট সময়ে করা সম্ভব হয় না। এটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন পোশাক খাতের দক্ষ শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এটি হয়।
ব্যাংকার আহমেদ শাহীন বলেন, পোশাক খাতের বাণিজ্য অনেকটা বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। সব নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে সব কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে জেনে বুঝে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।