ঈদের আগেই পোশাক শ্রমিকদের জুলাই মাসের মজুরি ও ঈদ বোনাস প্রায় পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন মালিকরা। তবে আগস্ট মাসের বেতন নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ আছে তাদের। যদিও শ্রমিক নেতারা বলছেন, মালিকদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে বৃহস্পতিবার ১৬ আগস্টের মধ্যে জুলাই মাসের বেতন ও বোনাস দেয়ার কথা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। বরং কয়েকটি কারখানায় বকেয়া বেতন ও মজুরি নিয়ে মালিকরা টালবাহানা করছে।
বৃহস্পতিবার জুলাই মাসের বেতন ও বোনাস পুরোপুরি পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন মালিকরা। বকেয়া বেতনের পাশাপাশি ১৯ আগস্টের মধ্যে চলতি মাসের অগ্রিম বেতন পরিশোধের ঘোষণাও দেন তারা। যদিও বেশির ভাগ শিল্প-কারখানায় ঘোষিত সময়ে জুলাই মাসের বেতন-বোনাস পরিশোধ করলেও চলতি মাসের অগ্রিম বেতন নিয়ে সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের (ডিআইফি) মহাপরিদর্শক মো. সামছুজ্জামান ভূইয়া জানান, জুলাই মাসের বেতন ও বোনাস প্রায় ৯৮ শতাংশ কারখানায় দেয়া হয়েছে। তবে আগস্ট মাসের অগ্রিম বেতন নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বলেন, জুলাই মাসের বেতন বোনাস নিয়ে বিকেএমইএ সদস্য কারখানাগুলোর কোন সমস্যা হয়েছে বলে এমন কোন খবর আমাদের কাছে নেই। এসব চলতি মাসের শুরুতেই দেয়া হয়েছে বলে আমাদের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। এছাড়া আগস্ট মাসের অগ্রিম ১০-১৫ দিনের বেতন মালিক শ্রমিক এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সম্মতির মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে।
পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ জ্যৈষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মজুরি ও বোনাস প্রদানে শুক্রবার (১৭ আগস্ট) পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যা হয়নি বলে আমার ধারণা। সম্পূর্ণ পরিসংখ্যান আমাদের হাতে না থাকলেও আমাদের আশা, এরই মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কারখানা তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে। অগ্রিম বেতনের জন্য আগামী ১৯ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, জুলাই মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে তেমন কোন সংকট হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও কারখানাভেদে আগস্ট মাসের বেতন নিয়ে কোন কোন কারখানায় মজুরি নিয়ে মালিকদের সমস্যা হতে পারে। কেননা একই মাসে বেতন, বোনাস এবং অগ্রিম বেতন দেয়া পুরোটাই মালিকের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে।
শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, মালিকদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে ১৬ আগস্টের মধ্যে জুলাই মাসের বেতন ও বোনাস দেয়ার কথা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এমনকি কোন কোন মালিক সরাসরি দিতে না পারার অক্ষমতার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে তিন মাসের বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বন্ধ কারখানা খুলে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত কারখানার ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পর এক মাসের বকেয়া বেতন পেয়েছে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার মেসার্স বাঁধন করপোরেশন লিমিটেডের আন্দোলনরত শ্রমিকরা। পোশাক কারখানাটির কয়েকশ শ্রমিক অবস্থান কর্মসূচি পালন ও পাঁচ কর্মকর্তাকে কারখানার ভেতর অবরুদ্ধ করলে বুধবার বিকেলে বিজিএমইএর সঙ্গে বৈঠকের পর মালিকপক্ষ গভীর রাতে গত জুন মাসের বকেয়া বেতন প্রদান করে। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) মাহমুদুর রহমান জানান, বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মালিকপক্ষ আগামী ১৮ আগস্ট ঈদ বোনাস এবং জুলাই ও আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন ৩০ আগস্ট প্রদান করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সব পাওনাই শ্রম আইন অনুযায়ী দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চলতি বছরের জুন মাসের বেতন বকেয়া পড়ায় জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় কারখানাটির শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করলে গত ১৯ জুলাই কলকারখানা অধিদফতর, বিজিএমইএ, কারখানাটির মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়। এতে ৩০ জুলাই বেতন পরিশোধের লিখিত ঘোষণাও দেয়া হয়। কিন্তু বেতন পরিশোধ না করে গত ৩১ জুলাই থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে পালিয়ে যায় মালিকপক্ষ। এরই জেরে বুধবার বিকেলে কারখানার কয়েকশ শ্রমিক জামগড়া এলাকায় টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় সড়কটিতে প্রায় আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে বিকেল ৫টায় সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরদিন বুধবার শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।