চলতি অর্থবছরে ৪৪ বিলিয়ন অর্থাৎ চার হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর প্রায় ৮৪ শতাংশই তৈরী পোশাক শিল্প খাত থেকে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদায়ী অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার প্রায় পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩৯ বিলিয়ন ডলার আসবে পণ্য রফতানি এবং বাকি ৫ বিলিয়ন ডলার আসবে সেবা খাত থেকে। ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে বিদ্যমান ২৭টি পণ্যের পাশাপাশি নতুন করে ৯টি পণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের রফতানি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর পণ্য ও সেবা খাতে রফতানির ল্যমাত্রা ছিল ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রফতানি হয়েছে ৪০.৯৪৯ মিলিয়ন ডলার। আমাদের রফতানির ল্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। গত বছর পণ্য খাতে রফতানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৩৬ ভাগ এবং সেবা খাতে ৭.৪৩ ভাগ। রফতানিতে প্রবৃদ্ধি সার্বিক হয়েছে ৬.৪৭ ভাগ।
সরকার বর্তমানে ২৭টি পণ্য রফতানি খাতে বিভিন্ন হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এবার আরো ৯টি পণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। পণ্যগুলো হলোÑ হিমায়িত সফটসেল কাঁকড়া, ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য ও ওষুধের কাঁচামাল, সিরামিক দ্রব্য, গালভানাইজড শিট বা কয়েলস, ফটোভলটাইক মডিউল, রেজার ও রেজার ব্লেডস, কোরিন, হাইড্রোকোরিক এসিড, কস্টিক সোডা এবং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড। রফতানির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে দেশের মোট রফতানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এবার দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরী পোশাক খাত থেকে ৩২ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার আসবে বলে ধরা হয়েছে, যা মোট রফতানি ল্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। তিনি বলেন, গত অর্থবছর তৈরী পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩০ হাজার ৬১৪ কোটি ডলার, যা মোট রফতানি আয়ের ৮৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এর মধ্যে নিট পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ডলার। আর ওভেন পণ্যে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১৫ হাজার ১৮৮ কোটি ডলার। তিনি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওভেন পোশাক রফতানির ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৫৩৯ কোটি ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। আর নিটওয়্যার রফতানির ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১৫০ কোটি ডলার; এতে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৫ কোটি ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ১২৪ কোটি ডলার (প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ)। কৃষিজাত পণ্য রফতানির ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭১১ কোটি ডলার (প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ)। অন্য দিকে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ওষুধে ১১২ কোটি ডলার এবং ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে হোম টেক্সটাইলে ৯৪০ কোটি ডলার রফতানির ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানির ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি ডলার, যা গতবারের চেয়ে ১ দশমিক ১১ শতাংশ কম।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রফতানি আয়ের বেশির ভাগ আসে তৈরী পোশাক খাত থেকে। গত অর্থবছর ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানির ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, রফতানি হয়েছে ৩০.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বছর তৈরী পোশাক রফতনি ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে এ রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তৈরী পোশাক নতুন বাজারে রফতানিতে আগে ৩ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতো, এখন আরো ১ ভাগ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ হারে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে তৈরী পোশাক রফতানিতে ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে।
রফতানি বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোর উন্নয়ন, ব্যবসায়িক জটিলতা নিরসন ও সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং স্থল ও সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম আরো গতিশীল করা সংক্রান্ত ব্যবসায়ী নেতাদের দাবির পরিপ্রেেিত মন্ত্রী বলেন, দেশের রফতনি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সহজ করতে নানামুখী পদপে গ্রহণ করা হয়েছে। বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য সরকার পর্যাপ্ত কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। চলমান কাজগুলো শেষ হলে রফতানি বাণিজ্য সহজ হবে। আন্তর্জাতিক রফতানি বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশ বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সমতা অর্জন করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।