অর্থবছরের শুরুতে রপ্তানি আয়ে ভালো অগ্রগতি হলেও দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসে তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছিল পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ। অথচ সদ্য সমাপ্ত আগস্টে এতে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা দূরে থাক, বরং পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত মাসে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকসহ প্রায় সব পণ্যের রপ্তানিই কমে গেছে। জুলাই ও আগস্ট মাস মিলিয়ে তৈরি পোশাক বাদে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের রপ্তানি কমেছে। গার্মেন্টস রপ্তানি বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হয়নি। জুলাই ও আগস্ট দুই মাসে সবমিলিয়ে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র আড়াই শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি বাড়াতে না পারলে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় পণ্য ও বাজার বহুমূখীকরণে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
ইপিবি প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। আলোচ্য সময়ে মোট রপ্তানি হয়েছে ৩২১ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। কিন্তু তার আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৬৪ কোটি ৯ লাখ ডলারের। অর্থাত্ রপ্তানি কমেছে ৫১ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকা। অথচ এক মাস আগে অর্থাত্ জুলাইয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছিল প্রায় পৌনে পাঁচ হাজার কোটি টাকার। গত জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৫৮ কোটি মার্কিন ডলারের। এর আগের অর্থবছরের জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ২৯৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত দুই মাসে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বেড়েছে পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে তিন দশমিক ৮২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে নিটওয়্যার ও ওভেন মিলিয়ে ৫৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ে এই দুটি পণ্যে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৪২ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের গার্মেন্টস পণ্য। তবে একই সময়ে হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতের রপ্তানি কমে গেছে। গত দুই মাসে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৭২ লাখ ডলারের। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল সাড়ে ১২ কোটি ডলারের। অর্থাত্ গত দুই মাসে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সাড়ে ১৫ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হলেও গত দুই মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ১১ লাখ ডলারের। রপ্তানি কমেছে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রায় ২৫ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি হলেও গত দুই মাসে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানিও কমেছে গত দুই মাসে সাড়ে চার শতাংশের মত। গত অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে ১৪ কোটি ডলারের রপ্তানি হলেও গত দুই মাসে তা নেমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ কোটি ডলারে।
সমুদ্রগামী জাহাজ, কাঠ ও কাঠজাতীয় পণ্য, তুলা ও তুলাজাতীয় পণ্য ছাড়াও বেশকিছু পণ্য রপ্তানি কমেছে। আর গার্মেন্টস পণ্য ছাড়া সামান্য কিছু পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে।
গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। আলোচ্য সময়ে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের রপ্তানি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩ হাজার ৯শ’ কোটি ডলারের। আর সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা যোগ করে এটি চার হাজার চারশ’ কোটি ডলারের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরেও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
বর্তমানে মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই আসে গার্মেন্টস পন্য রপ্তানির মাধ্যমে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গার্মেন্টস নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে মনযোগী হতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানির মূল বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে অন্যান্য বাজারেও মনযোগী হতে হবে। এ লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে অনেক আলোচনা শোনা গেলেও কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা।