বস্ত্র খাতের শেয়ারের দিকে বিনিয়োগকারীদের এ বছর বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোট লেনদেনে বস্ত্র খাতের অবদান বেড়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে সরকার এ খাতের কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন করে কর ছাড় দিতে যাচ্ছে- এমন আলোচনা রয়েছে শেয়ারবাজারে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে দৃষ্টি দিতে আগ্রহ বাড়াতে পারে বলে বাজার সংশ্নিষ্টরা মনে করছেন। যদিও গেল আগস্টে এ খাতের শেয়ারদরে মিশ্রধারা ছিল। খাতটির ৫০ কোম্পানির মধ্যে ২৩টির দর বেড়েছে, কমেছে সমান সংখ্যকের দর। বাকিগুলোর দর ছিল অপরিবর্তিত।
বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারেননি। বাজার সংশ্নিষ্টরা জানান, এটা দেশের শেয়ারবাজারের একটা ধরন। এক বছরে সব খাতের শেয়ারদর বাড়ে না। হয়তো বাজারের গতি-প্রকৃতি যারা ঠিক করেন, নানা বিষয় বিবেচনা করে তারা খাত নির্বাচন করেন। লেনদেনের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এ বছর হয়তো বস্ত্র খাতে বিনিয়োগ বাড়তে পারে।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের কোম্পানিগুলোর জন্য উৎসে কর ১ শতাংশ এবং করপোরেট কর ১৫ শতাংশ ধার্য করা হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করপোরেট কর সাড়ে ১২ শতাংশ এবং গ্রিন কারখানা হলে ১২ শতাংশ ধার্য করা হয়েছিল। তবে উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে উৎসে কর আগের অর্থবছরের মতো শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সূচকে পিছিয়ে পড়ার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা বিশেষত তাদের সংগঠন বিজিএমইএ উৎসে কর পুরোপুরি তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। একই সঙ্গে করপোরেট কর হার তালিকাভুক্ত, অতালিকাভুক্ত এবং গ্রিন ফ্যাক্টরি নির্বিশেষে ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিজিএমইএর এ দাবি বিশেষভাবে বিবেচনা করে দেখছে। তবে বাজেটে কর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এক দফায় তা সংশোধনের পর ফের সংশোধন করার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এখন সরকারের পক্ষ থেকে উৎসে কর শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ কমিয়ে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় আছে। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক কর হার তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি নির্বিশেষে সবার জন্য ১২ শতাংশ করা হতে পারে। এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে মতামতও চাওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সমকালকে জানান, এ বিষয়ে এখনও তার কাছে প্রস্তাব এসে পৌঁছায়নি। প্রস্তাব এলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দ্রুততার সঙ্গে মতামত দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক মোহাম্মদ নাছির সমকালকে বলেন, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সূচকে দেশের পোশাক খাত অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে। এ কারণে ছোট ও মাঝারি কোম্পানি ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি নাজুক হয়ে যাওয়ার আগেই সরকারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উৎসে কর পুরোপুরি তুলে দেওয়া এবং করপোরেট করসহ সব ধরনের কর ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছিল। সরকার উৎসে কর শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কর হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে বলে শুনেছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে তিনি আশা করেন।
শেয়ারবাজারে বর্তমানে বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৫০টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ২০টির মতো। কর হারে নতুন করে ছাড় পেলে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বস্ত্র খাতের সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত আগস্টে বস্ত্র খাতের ৫০ কোম্পানির ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। আগস্টে এ স্টক এক্সচেঞ্জে ১১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের লেনদেন ছিল মোটের ২০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। জুলাই মাসে ডিএসইর মোট লেনদেনে বস্ত্র খাতের অবদান ছিল মোটের ১৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর আগে মে মাসে ছিল ১৬ শতাংশ। গত মার্চ মাস থেকে দেনদেন ক্রমাগত বাড়ছে।