Home Bangla Recent বিতর্কিত অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের খবরদারি শেষ হচ্ছে

বিতর্কিত অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের খবরদারি শেষ হচ্ছে

অনেক আলোচনা আর সমালোচনার জন্মদিয়ে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিচ্ছে তৈরি পোশাকের বিদেশি দুই ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। তাদের অনুপস্থিতিতে গত ৫ বছরের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে ক্রেতাজোটের মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার, বিজিএমইএ ও বুয়েট বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল বা সংস্কার সমন্বয়ক সেল (আরসিসি)। যেটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি পোশাকখাতের মানোন্নয়নে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স-এর পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।

আলোচিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বিষয়টি তদারকির জন্য ২০১৩ সালে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে বাংলাদেশে পৃথক দুটি ক্রেতাজোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দুটি জোটে আড়াইশ’র বেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ড যুক্ত রয়েছে। ৫ বছরব্যাপী সংস্কার কার্যক্রম তদারকির পর ৩০ জুন তাদের মেয়াদ শেষ হয়। এরই মধ্যে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সভুক্ত ২ হাজার ৫৫৯টি কারখানার সংস্কার কাজ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং এই দুই ক্রেতাজোটের আবেদনের পর আদালতের নির্দেশে সরকার তাদের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অতিরিক্ত সময়সীমার এখন সোয়া দুই মাস পার হয়েছে। তবে আবারও দু’ ক্রেতাজোটের মেয়াদ আরেক দফায় বাড়ানোর চাপ আসছে ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম (আইএলআরএফ) থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সময় বাড়ানোর পক্ষে সুপারিশ করেছে। তবে বিজিএমইএর আপত্তির মুখে মেয়াদ আর বাড়ান হচ্ছে না। এ ছাড়া আদালতের এ বিষয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিদেশি ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সকে বর্ধিত মেয়াদ শেষে এ দেশ থেকে চলে যেতে হবে। এরপর কোনোভাবেই তাদের আর সময় দেয়া হবে না। কারণ শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাস তাদের অন্তর্বর্তীকালীন মেয়াদ বাড়ান হয়েছিল। নতুন করে এ মেয়াদ আর বাড়ান হবে না। কারণ আমরা আদালতের রায় লংঘন করতে পারি না। আদালত ৬ মাস মেয়াদ বাড়িয়ে এরপর আর মেয়াদ বাড়ান যাবে না বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রী জানান, এখন পোশাক খাতে তাদের পরিপূরক হিসেবে কারখানার কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তদারকির দায়িত্ব পালন করবে আরসিসি। এ অন্তর্বর্তী সময়ের মধ্যে আরসিসি পুরোপুরি প্রস্তুত হবে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আরসিসিকে শক্তিশালী করার জন্য এর মধ্যে সরকার ৬০ জন প্রকৌশলী নিয়োগ দিয়েছে। পর্যায়ক্রম বাকি নিয়োগ সম্পন্ন করার পর সব মিলিয়ে ১৩০ জন প্রকৌশলী এ আরসিসিতেই স্থায়ীভাবে কাজ করবে। নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। পুরো জনবল, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সরকারের সব ধরনের সহায়তা নিয়ে এটি (আরসিসি) কাজ শুরু করলে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের চেয়েও ভালোভাবে কাজ করতে পারবে। ফলে বর্তমানের চেয়ে কম খরচে কারখানার সংস্কার কার্যক্রম তদারকি করা সম্ভব হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চাপ থাকতেই পারে, সেদিকে আমাদের কোনো দৃষ্টি নেই। মনে রাখতে হবে চাপ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে কিছু আদায় করা যাবে না। তাছাড়া গত পাঁচ বছরে রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটেনি। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি দেশে আর রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটবে না। অন্যদিকে মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম (আইএলআরএফ)। ফোরাম মনে করে, বাংলাদেশে আর কাজ করার সুযোগ না পেলে গত ৫ বছরের সব সংস্কার অগ্রগতি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতের পরিবেশের যে উন্নতি হয়েছে, তা টেকসই নাও হতে পারে। এতে সরকার, মালিক-শ্রমিক সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে আইএলআরএফের নির্বাহী পরিচালক জুডি গেয়ারহার্ট বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর অনেক ব্র্যান্ড এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। তখন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলো। ৪৪ লাখ শ্রমিকের রুটি-রুজিতে যাতে আঘাত না আসে, সে ভাবনা থেকে দায়িত্ব নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে বাংলাদেশ ত্যাগ না করার জন্য অনুরোধ করেছে এ আইএলআরএফ। তাদের কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমমান এবং কর্মপরিবেশের নিরাপত্তায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখন সেটির ধারাবাহিকতা থাকা দরকার।

বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের মেয়াদ শেষে তাদের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কাজ করবে আরসিসি। ফলে জোটগত তদারকি বিলুপ্ত হলেও বাংলাদেশে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম বন্ধ হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here