সংস্কারে অগ্রগতি দেখাতে ব্যর্থ ২১৯ কারখানা রফতানির সুযোগ হারাতে পারে। এসব কারখানাকে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সনদ না দিতে পোশাক খাতের রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) গত রোববার পৃথক চিঠিতে দুই সংগঠনকে এ নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এখনই এই কারখানাগুলোর ইউডি বন্ধ করছে না বিজিএমইএ। সংস্কারে সহযোগিতা দিয়ে কারখানাগুলোকে উৎপাদনে ধরে রাখার শেষ চেষ্টা করা হচ্ছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
রফতানি আদেশ পাওয়ার পর কাঁচামাল আমদানির অনুমতি সনদ হচ্ছে ইউডি। সরকারের হয়ে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ সদস্যদের এই সনদ দিয়ে থাকে। ইউডি সনদ না থাকলে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করা যায় না।
ডিআইএফই সূত্রে জানা গেছে, ইউডি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার তালিকায় বিজিএমইএর সদস্য কারখানা ১৩৪টি। বাকি ৭৪ কারখানা বিকেএমইএর সদস্য। এসব কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্তত ৩২টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বারবার তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে সংস্কারকাজে গতি আনতে আট মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ না হলে লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। তবে আপাতত লাইসেন্স বাতিল না করে ইউডি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিজিএমইএকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা জানান, এসব কারখানা পোশাক খাতের মূল ধারার কারখানা নয়। মূলত ঠিকাভিত্তিক উৎপাদনই এদের মূল কাজ। মূলধারার না হওয়ায় সংস্কারের অর্থ ব্যয় করা এসব কারখানা মালিকদের জন্য সহজসাধ্য নয়। এ ছাড়া ভাড়া বাড়িতে অবস্থিত বেশিরভাগ কারখানা ভবনের সংস্কারের দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়েও জটিলতা আছে। এ কারণে সংস্কারে গতি আসছে না। ফলে ভবনের কাঠামো সংস্কারে ঋণ সহযোগিতা কে পাবে, তা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় সংস্কার এগোচ্ছে না। পোশাক খাতের সংস্কারবিষয়ক দুই ক্রেতাজোট ইউরোপের অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানের বাইরে থাকা জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অধীনে (এনপিএ) এসব কারখানার সংস্কার চলছিল। সরকারের পক্ষে ডিআইএফইকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির সমকালকে বলেন, ডিআইএফইর চিঠি তারা পেয়েছেন। এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে বোর্ডসভা ডাকা হবে। এসব কারখানার ভাগ্য বোর্ডেই নির্ধারিত হবে। এর আগে এসব কারখানার মালিকদের নিয়ে ডিআইএফইর সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। তবে বিজিএমইএ নীতিগতভাবে ইউডি স্থগিত বা কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে নয়। কারণ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া শেষ বিচারে ভালো কোনো সমাধান নয়। এতে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হবেন। শিল্প ও দেশের অর্থনীতি চাপে পড়বে। এ কারণে কীভাবে সহযোগিতা দিয়ে সংস্কারে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে কারখানাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সে চেষ্টা করবেন তারা।
পোশাক খাতের মূল সংস্কার চলছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে। দুই জোটের ক্রেতারা যেসব কারখানা থেকে পোশাক কিনে থাকেন, এ রকম দুই হাজার ১৯৭ কারখানার প্রাথমিক পরিদর্শনে চিহ্নিত ত্রুটির সংস্কার এখন শেষ পর্যায়ে। জোটের বাইরে অন্য ক্রেতাদের রফতানি আদেশ সরবরাহ করা হয়- এ রকম কারখানার সংখ্যা এক হাজার ৮২৭টি। তবে প্রাথমিক পরিদর্শনে বাদপড়া এবং অনেক কারখানা নিজেরাই বন্ধ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ডিআইএফইর অধীনে কারখানার সংখ্যা এখন ৮০৯টি। অনুমোদিত সংস্কার পরিকল্পনা (ক্যাপ) অনুযায়ী ১০৭টি কারখানার শতভাগ সংস্কারকাজ শেষ করেছে। ৮০ শতাংশ সংস্কার শেষ হয়েছে ৪২২টির। ৫০ শতাংশের মতো সংস্কার শেষ হয়েছে ১১১টির। গোটা পোশাক খাত সংস্কারের উদ্দেশ্যে কারখানাগুলোর পরিদর্শন এবং সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।