Home Bangla Recent তিন মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৮ কোটি ডলার

তিন মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৮ কোটি ডলার

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশ কয়েক বছর ধরেই খারাপ অবস্থায় আছে। গত তিন মাসে পোশাক রপ্তানি কমে গেছে ২৮ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার ৩২৪ কোটি টাকা)। আর দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৯৫ শতাংশ হয় নয়টি দেশে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, বেলজিয়াম ও কানাডাসহ আটটি দেশই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। গত এক বছরে (২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন) আট দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা। এই আটটি দেশেই তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মাইনাস প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। এজন্য কেবল তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। বিভিন্ন দেশে বিকল্প পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগ দেয়াসহ পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর নির্ভর না করে নতুন নতুন বাজার সন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বা হয়েছে, দেশে মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৪২ শতাংশই আসে পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে। তিন মাসের ব্যবধানে (২০১৮ সালের মার্চের তুলনায় ২০১৮ সালের জুনে) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে এক বছরের ব্যবধানে সার্বিকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর মোট রপ্তানির ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ আয় হয় ওভেন গার্মেন্টস পণ্য থেকে। এর বাইরে ৪১ দশমিক ৯৬ শতাংশ আয় হয় নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করে। এছাড়া, অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে আয় হয় ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে ৪০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী শ্রমিক। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে চালু আছে চার হাজার ৫৬০টি তৈরি পোশাকের কারখানা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মাইনাস ১২ দশমিক ২৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বেলজিয়ামে। দেশটিতে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ১৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার। ২০১৮ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার। দেশটিতে ২০১৬ সালের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৫ সালের একই সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছিল ২১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। এছাড়া জার্মানিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১২ দশমিক ১ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে নেদারল্যান্ডসেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া স্পেনেও রপ্তানি কমেছে দুই শতাংশ। গত এক বছরে ফ্রান্সে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। এছাড়া কানাডায় কমেছে ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৩২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। আর এপ্রিল থেকে জুনে রপ্তানি হয়েছে ১৪২ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

রপ্তানির প্রধান আট দেশেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলকভাবে রপ্তানি আয় কমে গেছে। এটা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো খবর নয়।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশ কয়েক বছর ধরেই খারাপ অবস্থায় আছে। দেখতে হবে রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমে গেছে, নাকি রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন কমে গেছে। তবে গার্মেন্টস খাত সংস্কার করতে গিয়ে বেশকিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও কেবল তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। এজন্য বিভিন্ন দেশে বিকল্প পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। আবার পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপর নির্ভর না করে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরো রপ্তানি আয়ে হঠাৎ বিপর্যয় নেমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে হঠাৎ করে এ বিপর্যয় নেমেছে। এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ হাজার ৭১ কোটি টাকা। গত আগস্টে পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩২১ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ গত জুলাইয়েও পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩৫৮ কোটি মার্কিন ডলার। গত আগস্টে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় কমেছে ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার। গত আগস্টে পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩২১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালের আগস্টে পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩৬৪ কোটি মার্কিন ডলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here