দেশের মোট রফতানি আয়ে ভারতের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে পোশাক খাত। বিশেষ করে দেশটিতে টি-শার্ট, ট্রাউজার ও শার্ট ভারতে রফতানি বাবদ আয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি আয় হয় ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ওই অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি আয়ে ভারতের অংশ ছিল ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অন্যদিকে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি আয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার ডলারে। এ আয়ে ভারতের অংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে বিভিন্ন পণ্য রফতানি বাবদ বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৮৭ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ আয়ের এক-তৃতীয়াংশই এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি বাবদ। পোশাক পণ্যের মধ্যে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে ওভেন পণ্যই গেছে সবচেয়ে বেশি।
ইপিবির দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরে ভারতে রফতানি হওয়া পণ্যের ২৩ শতাংশই ছিল পোশাকের ওভেন পণ্য। ওভেন পণ্য রফতানি বাবদ গত অর্থবছরে আয় হয়েছে ২০ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান ট্রাউজার ও শার্ট পণ্যের।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতে নারী ও পুরুষের ব্যবহারযোগ্য ট্রাউজার রফতানি বাবদ আয় হয়েছে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮৯০ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই পণ্য রফতানি থেকে আয় হয় ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৬ ডলার। এ হিসাবে শুধু পুরুষ ও নারীদের ওভেন ট্রাউজার রফতানি বাবদ ভারত থেকে আয় বেড়েছে ১১২ শতাংশের বেশি।
গত অর্থবছরে ভারতে পুরুষদের ব্যবহূত ওভেন শার্ট রফতানি বাবদ আয় হয়েছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৪৮ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই পণ্য রফতানি বাবদ ভারত থেকে আয় হয়েছিল ১ কোটি ৬৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯২৮ ডলার। এ হিসাবে পুরুষের ওভেন শার্ট ভারতে রফতানি বাবদ আয় বেড়েছে ১৮৩ শতাংশেরও বেশি।
ভারতে টি-শার্ট রফতানি থেকেও বাংলাদেশের আয় বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি রফতানি বাবদ বাংলাদেশের আয় দাঁড়ায় ২ কোটি ৮৮ লাখ ১৭ হাজার ৪৯০ ডলারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ পণ্য থেকে আয় হয়েছিল ১ কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৫ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভারতে টি-শার্ট রফতানি বাবদ আয় বেড়েছে ১০৩ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটিতে বাংলাদেশের যেকোনো পণ্য রফতানিতে সময় অনেক কম লাগে। দুয়েকটি পণ্য বাদে বাংলাদেশী যেকোনো পণ্য প্রবেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয় দেশটি। যেসব কাপড় দিয়ে বাংলাদেশ পোশাক পণ্য তৈরি করে, সেগুলো ভারতে পাওয়া যায় না। এসব কারণেই দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে বিপুল পরিমাণে। ভবিষ্যতে এ রফতানি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রফতানি খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রতিবেশী ও জনসংখ্যার বিচারে ভারতের বাজার বাংলাদেশের জন্য অনেক সুবিধাজনক। কিন্তু শুল্ক বাধার কারণে দেশটিতে রফতানি কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। বর্তমানে রফতানি বৃদ্ধির হারও শুধু পোশাক খাতনির্ভর। দেশটিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেলেও রাজ্যের ভিন্নতায় এখনো কাউন্টারভেইলিং ডিউটি দিতে হয়।
রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ভারতে রফতানি সম্ভাবনা অনেক বেশি হলেও অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দেশটি নিজস্ব স্থানীয় চাহিদা নিজেই মেটাতে সক্ষম। এছাড়া রয়েছে বিশেষ নীতিসহায়তা। ফলে ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকলেও এর সঠিক ব্যবহার করে বাজার সম্প্রসারণের প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে শুধু পোশাক পণ্যে রফতানি প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। আরো অনেক পণ্যই দেশটিতে রফতানির সুযোগ রয়েছে।